সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
চলছে মাঘ মাস। প্রকৃতিতে এখন শীতল পরিবেশ। কথায় আছে ‘মাঘের শীতে বাঘে পালায়’। এই প্রবচনটি যেন এবার বাস্তবে প্রকাশ পেয়েছে খোদ রাজধানীতেও। কয়েকদিন ধরে নেই সূর্যের দেখা। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। তীব্র ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষরা।
একদিন কাজ না করলে তাদের অনেকের পরিবারের চুলা বন্ধ থাকে। তাই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করেও কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। আবার এই সময়ে কাজের চাহিদা কম থাকায় অনেকে দিনমজুরের কাজও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। যার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যেখানে অনেকেই দিনমজুরের কাজ পেতে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেসব স্থানে ভোরের শীত ও কুয়াশার মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে থাকছেন কাজের আশায়। তারা বলছেন, পেটের দায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, তীব্র শীতেও প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে হয়। কাজ না করলে খাওয়া নেই, তাই ক্ষুধা মানে না মাঘের শীত।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের মতো গুলশান বাড্ডা লিঙ্ক রোড সংলগ্ন সিগন্যালের ফুটপাতে দীর্ঘ দিন ধরে কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। আর যাদের বাসা বাড়ি বা অন্য কোথাও দিনমজুর দরকার হয় তারা এমন সব স্থান থেকে শ্রমিকদের কাজের জন্য নিয়ে যায়।
কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৫৫ বছর বয়সী হায়দার আলী। তার কাছে দেখা যায় কোদাল, ডালি, শাবল। তিনি বলেন, কয়দিন ধরে খুব বেশি শীত। এই শীতে কাজ করাই মুশকিল। কিন্তু কাজ না করলে খাবার জুটে না, কাজ করে দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা আমাদের। তাই তীব্র শীতেও এসে কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভোরে এসে এখানে দাঁড়াই, যাদের কাজের লোকের দরকার হয়, তারা এসে আমাদের নিয়ে যায়। সারাদিন কাজ করে এখন হাজিরা পাওয়া যায় ৭০০/৮০০ টাকা।
তিনি বলেন, কি করার আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, কাজ না করলে পরিবার নিয়ে খাওন জুটবে না। তাই আমাদের কাজে মানে না মাঘ।
এদিকে গত কয়দিনের তীব্র শীতে অনেক মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজের জন্য অপেক্ষা করা আরেক দিনমজুর আব্দুর রহিম বলেন, তীব্র শীতের মধ্যেও ভোরে এসে এখানে দাঁড়িয়েছি, কুয়াশায় ভিজে গেছি, ঠান্ডায় কাঁপন ধরে গেছে। এভাবে প্রতিদিন আসি। কিন্তু এ ঠান্ডার সময় পর পর দুই দিন কাজ পাইনি। আমার মতো অনেকেই এখানে ৪/৫ ঘণ্টা বসে থেকে বাড়ি ফিরে গেছে। আমাদের মতো শ্রমজীবী মানুষদের অন্যরা নিয়ে গিয়ে মূলত বাড়ির বিভিন্ন কাজ করায়। তার মধ্যে আছে মাটি তোলা, বালু, খোয়া তোলা, মাটি কাটাসহ নানান কাজ।
এদিকে সকালের শীত উপেক্ষা করে সকালে কাজে বেড়িয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। তাদের মধ্যে ৪ জনের একটি দল রাস্তায় ড্রেন থেকে আবর্জনা তুলে পরিষ্কার করছিল। সেখানে কাজে অংশ নেওয়া এরশাদ আলী বলেন, এই শীতের সকালে এসব কাজ খুবই কষ্টের। তবুও কি করার, জীবিকার তাগিদের করার লাগে। এই শীতের ভোরে মানুষ যখন কম্বল, লেপের ভেতরে থাকে তখন আমাদের শীত উপেক্ষা করে ড্রেনে নেমে কাজ করতে হয়। শীতে শরীর অবশ হয়ে আসে, তবুও কিছু করার থাকে না। কাজ করতে হয়।
গত কয়েকদিন ধরে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ছে, তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকছে। আজ ঢাকাসহ সারা দেশে তাপমাত্রা কমে শীত আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সেই সঙ্গে রাজধানীতে শৈত্যপ্রবাহেরও আভাস দিয়েছে তারা। তবে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে মেঘলা আকাশ বিরাজ করলেও শীত কিছুটা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত মেঘলা পরিস্থিতি বিরাজ করলে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে। তবে জানুয়ারি মাসজুড়ে শীতের অবস্থা এরকমই থাকবে।
গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ ডিগ্রির নিচে।
অবহাওয়া অফিস বলছে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান এত কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত দিনের তাপমাত্রা কমে গেলে রাতের তাপমাত্রাও কমে যায়। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমায় দিনে রাতে সবসময় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)