রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২


ভারত থেকে আসা ভয়ংকর মাদক কিটামিন কুরিয়ারে পাঠানো হচ্ছিল ইতালি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৩

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর টঙ্গীর একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ইতালিতে পাচারকালে টাওয়ালের মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা সাড়ে ৬ কেজি ভয়ংকর মাদক কিটামিন জব্দ করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

এই ঘটনায় চাঁদপুর ও ফরিদপুর থেকে মাসুদুর রহমান জিলানী (২৮) ও আরিফুর রহমান খোকা (৪৩) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা কুরিয়ারের মাধ্যমে কিটামিন পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মহাপরিচালক হাসান মারুফ।

তিনি বলেন, ডিএনসির গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন যাবত কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে। এই গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, ডিএনসির কাছে গোপন তথ্য ছিল যে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে দেশের বাইরে মাদক পাচার করছে।

এমন তথ্যে টঙ্গী ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে অবস্থান নেয়। পরে ফেডেক্সের সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা থেকে ইতালিগামী একটি পার্সেল জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে হাসান মারুফ বলেন, পার্সেলের সার্বিক অবস্থা ও অস্বাভাবিক ওজন দেখে সন্দেহ হলে পার্সেলটি পরীক্ষা করে একটি খাকি রঙের কার্টুনের ভেতর পৃথক সাতটি সাদা তোয়ালে পাওয়া যায়। পরে ঘটনাস্থলেই ডিএনসির রাসায়নিক পরীক্ষক দ্বারা তোয়ালের রাসায়নিক পরীক্ষা করে দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি ক শ্রেণির ভয়াবহ মাদক কিটামিন পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে জব্দকৃত পার্সেলের প্রেরকের ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে আত্মগোপন করেছেন। এর ভিত্তিতে ঢাকা গোয়েন্দা ইউনিট একটি অভিযান পরিচালনা করে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর এলাকা থেকে প্রেরক মাসুদুর রহমান জিলানীকে গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তীতে আরও তথ্য পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, কিটামিন চালান ফরিদপুর জেলার আরিফুর রহমান খোকার যোগসাজশে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। খোকা এই আন্তর্জাতিক চক্রের অন্যতম হোতা।

এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার সালথা থানার আটঘর বাজার এলাকায় আরও একটি অভিযান পরিচালনা করে আরিফুর রহমান খোকাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুইটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং একটি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

হাসান মারুফ বলেন, কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা অতীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে পার্টি ড্রাগ হিসেবে।
তিনি বলেন, কিটামিন একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর মাদক, যা স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও মূত্রথলির গুরুতর ক্ষতি, মানসিক সমস্যা এবং আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। নিয়মিত সেবনে জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে।

কিটামিন পাচারের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, তোয়ালে বা মোটা কাপড় ব্যবহার করে মাদক পাচার একটি গোপন কৌশল। যেখানে তোয়ালের ভেতরে গঠন পরিবর্তন করে মাদক লুকানো হয়। কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশনে তোয়ালে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকানো হয়, ফলে মাদক ফাইবারে মিশে যায়। কাপড় বা তোয়ালেটি মাদক শোষণ করলে সেটি দেখতে স্বাভাবিক কাপড়ের মতোই মনে হয়, ফলে এটি সহজে শনাক্ত করা যায় না। পাচারকারীরা পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেস ব্যবহার করে ওই কাপড় থেকে পুনরায় মাদক উত্তোলন করে। এই পদ্ধতি কোকেন, হেরোইন ও কেটামিন পাচারে বেশি ব্যবহৃত হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের নতুন নতুন কৌশল প্রতিরোধে কুরিয়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের রুট কি-না জানতে চাইলে ডিজি মাদক বলেন, এটা বলা যাবে না। প্রতিটি দেশেই চাহিদার প্রেক্ষিতে মাদক আনা নেওয়া হয়।

ইয়াবার বিস্তার রোধে ডিএনসির পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। এক্ষেত্রে বাবা মাকেও ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তান কার সঙ্গে মেশে সেই বিষয়টা নজর রাখতে হবে। আমাদের দেশে বিশাল বর্ডার থাকায় ইয়াবা চলে আসে।

বারিধারার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেলিম প্রধানের অবৈধ বার পরিচালনার ঘটনায় ডিএনসির গোয়েন্দা ব্যর্থতা আছে কি জানতে চাইলে জনবল সংকটের অজুহাত দিয়ে ডিজি মারুফ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে অপারেশন ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে ১ হাজার ৬২২ জন কাজ করে সারা বাংলাদেশে। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে আমরা যেখানে তথ্য পাই সেখানেই কাজ করি। বিগত ৬ মাসে আমাদের অভিযানের সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁর আড়ালে সিসাবার পরিচালনা করা হয়।

এ সব চক্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের কোনো সদস্য ঢাকায় অবস্থান করেন না। এ সব মাদকগুলো তারা পাওয়ার পর প্রসেস করে ঢাকায় এসে বুকিং দিয়ে আবারও চলে যায়। এই চক্রের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সহযোগিতা রয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারদের কেউই প্রবাসী ছিলেন না। তবে তাদের পরিচিত প্রবাসীদের সহযোগিতায় এই চক্র গড়ে ওঠে। এই মাদকটি আমাদের দেশে ব্যবহার তেমন একটা নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে মাদকটি আসে। এরপর প্রসেস হয়ে বিদেশে চলে যায়।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:২৫ ভোর
যোহর ১২:৫৭ দুপুর
আছর ০৪:২৫ বিকেল
মাগরিব ০৬.১৪ সন্ধ্যা
এশা ০৭:২৮ রাত

রবিবার ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫