শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৫ বছর বয়সী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, মামলাটি আমাদের ডিবি তেজগাঁও বিভাগে এসেছে। আসামিরা রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। গৃহকর্মী কীভাবে মারা গেল সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। আইনের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করে বের করা হবে। এ বিষয়ে দোষী কেউ থাকলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ২/৭ নম্বর বাড়ির নিচ থেকে প্রীতি (১৫) নামে এক গৃহকর্মীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সেটি ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। নিহত প্রীতি উরাংয়ের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারে। প্রীতি সেই এলাকার চা শ্রমিক লোকেশ উরাংয়ের মেয়ে।
ওই ঘটনার বাসার গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। গৃহকর্তা সৈয়দ আশফাকুল হক একটি জাতীয় দৈনিকের নির্বাহী সম্পাদক। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় লোকেশ উরাং অভিযোগ করেন, সেই বাসার জানালায় সেফটি না থাকায় তার মেয়ে অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি মালিকের অসতর্কতা ও অবহেলাকে দায়ী করেছেন।
লোকেশ উরাংয়ের দায়ের করা মামলায় আশফাকুল হক ও তার স্ত্রীকে আদালতে তোলা হয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে জামিনের জন্য আদালতে হাজির করা হলেও আদালত তা মঞ্জুর করেনি। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
নিহতের বাবার অভিযোগ— প্রীতি দুই বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করেন। কিন্তু এক দিনের জন্যেও তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট একই বাসা থেকে ফেরদৌসী নামে এক গৃহকর্মীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ফেরদৌসীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই গৃহকর্মী ৪ আগস্ট বাসাটির আটতলা থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেন বাসার কর্তা। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় ওই শিশুটি যৌনাঙ্গে আঘাত পাওয়ায় তার একটি অপারেশনও করেন চিকিৎসকরা। তবে শরীরের অন্য কোথাও তেমন আঘাত ছিল না।
এ ঘটনায় পরে শিশুটির মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন, সৈয়দ আশফাকুল হক (৫৬), তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার (৪৬) ও আসমা আক্তার শিল্পী (৫১)। এই মামলায় ফেরদৌসীকে ওই বাসায় এনে দেওয়ার জন্য শিল্পীকেও মামলার আসামি করা হয়।
ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই প্রায় সাত মাসের মাথায় ১৫ বছরের তরুণী প্রীতিকে বাসার নিচ থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়দের দাবি, গৃহকর্তাসহ বাসাটির লোকজন গৃহকর্মীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। দুই গৃহকর্মীর মধ্যে একজনকে গুরুতর আহত এবং আরেকজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনা তেমনি ইঙ্গিত দেয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)