শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আধুনিক নগরী বিনির্মাণে প্রতিনিয়ত নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে এই উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অনেকটাই বঞ্চিত দক্ষিণখানের ও উত্তরখান বাসিন্দারা। জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত সেখানে কয়েক লাখ মানুষ। এসব সমস্যার সমাধান কবে মিলবে, তার উত্তরও জানা নেই কারও।
এছাড়াও বৃষ্টি না হলেও রাজধানীর দক্ষিণখান এবং উত্তরখান অধিকাংশ জায়গায় এখনো পানি নিচে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে নাগরিকের সেবাই নিয়োজিত থানা পুলিশের সেবা কার্যক্রম। দক্ষিণখান থানা এলাকার ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তরখানের ৪৪ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক কেটে ফেলায় থানা পুলিশের গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, দক্ষিণখান বাজার থেকে উত্তরা রোগীর নিয়ে যাওয়ার জায়গায় নেই বললেই চলে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তায় খুড়াখুঁড়ি জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দক্ষিণখান বাজার থেকে কসাই বাড়ি এবং হাজি ক্যাম্পে রাস্তায় পাইপ বসানোর পরে মাটি ভরাট না করায় সাধারণ হেঁটে চলতেই চরম ভোগান্তিতে শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণখান থানা রোড থেকে শুরু করে চালাবন, ফায়দাবাদ মিজানের গ্যারেজ সহ বেশির ভাগ জায়গায় হাটুর উপরে পানি যেন এই এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যসঙ্গী।
৪৪, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মূল সড়ক থেকে শুরু করে শাখা রোডগুলোতেও পানি জমে দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এছাড়া সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর ভূমিকাও নিরব। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানার মূল সড়ক থেকে শুরু করে আনাচে কানাচে এর বেশিরভাগ সড়ক।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে রাস্তা কেটে ফেলায় মূল সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে। প্রতিদিন যুবক বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী এমনকি শিশুরাও সড়কের গর্তে পড়ে আহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দক্ষিণখান কেসি হাসপাতাল ও আর্ক হাসপাতালের সামনে নিয়মিত পানি জমে থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। ডাইরিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলছে প্রতিনিয়ত।
চাকরিজীবী, গার্মেন্টস কর্মী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মানুষের উত্তরা থেকে দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকায় যাতায়াত করে। বারবার তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে রাস্তা সংস্কারে আবেদনও জানায় এলাকাবাসী। কিন্তু কাজ হয়নি।
এলাকাবাসীরা জানান, গ্রামের রাস্তাও নাকি এর চেয়ে বহুগুণ ভালো। রাস্তা সংস্কার যাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তারা এর কোনো সমাধান দিতে পারছে না, দিচ্ছেও না। নেতৃত্বস্থানীয় যারা আছেন, তাদের এই রাস্তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই বলেও জানান ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী।
এদিকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় পুলিশ এক্ষেত্রে কি কি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তরখান থানার ওসি আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, বর্তমানে রাস্তার বেহাল দশা থাকায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পুলিশ প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছে। সড়কের অবস্থা খারাপ থাকায় সাধারন মানুষ জরুরি সেবা নিতে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের অফিসাররা অনেক সময় পায়ে হেঁটেই অনেক কষ্ট করে সেবা কার্যক্রম ঠিক রাখার চেষ্টা করছে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা দ্রুততম সময়েই নিরসন করা হবে। সেনাবাহিনী এই রাস্তার কাজ করছে। এটি সম্পন্ন হলেই অত্র এলাকা উন্নয়নের আওতায় চলে আসবে, জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। জলাবদ্ধতাই শুধু নয়, এই এলাকার রাস্তাঘাটগুলো আমরা আধুনিকায়ন করে দেবো
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)