বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজ ও গাদীরে খুম দিবস উপলক্ষে বিশ্ব মানবতা ও সংহতি ফাউন্ডেশন আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিদায় হজ্ব দিবস উপলক্ষে বক্তারা বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর যেহেতু আর কোনো নবী আসবেন না তাই বিদায় হজের ভাষণে আমাদের প্রিয় নবী উম্মতের জন্য বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। প্রিয় নবী বিদায় হজের ভাষণে বলেন, তোমরা যতদিন পবিত্র কুরআন ও আমার আহলে বাইতকে অনুসরণ করবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না।
অনুষ্ঠানে গাদীরে খুম দিবস উপলক্ষে বক্তারা বলেন, এ দিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আমিরুল মুমিনিন আলীকে (আ.) খিলাফতে অধিষ্ঠিত করেন এবং প্রিয় নবী বলেন, আমি যার মাওলা ও আলীও তার মাওলা।
বিদায় হজের কয়েক দিন পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত আলীকে (আ.) নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেছিলেন। দিনটি ছিলো দশম হিজরির ১৮ জিলহজ। ওই দিন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ফেরার পথে গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলীকে (আ.) মুমিনদের নেতা বা মাওলা হিসেবে মনোনীত করেন।
ওই ঐতিহাসিক ঘটনার ৮০ মতান্তরে ৮৪ দিন পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিদায় হজ শেষে তিনি মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এহরাম পরা অবস্থায়। সঙ্গে ছিলো সোয়া লাখ সাহাবি । ১৮ জিলহজ পথে মদিনার নিকটবর্তী গাদির-এ-খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতের আগের আয়াত তথা সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।
সুরা মায়েদার ওই ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, "হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তার পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।" আল্লাহর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ নাজিলের পর, প্রিয় নবী গাদির-এ-খুম নামক স্থানে অভিষেক উৎসবের আয়োজন করে আল্লাহর ওই ঘোষণাটি উম্মতদের জানিয়ে দেন ।
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাদির-এ-খুম নামক এলাকায় এসে থামলেন, তখন তিনি সবাইকে একত্রিত করলেন। একপর্যায়ে হজরত আলীর (আ.) হাত ধরে উপরে তুললেন এবং জনতার উদ্দেশে বললেন, তোমরা কি জানো, আমি মুমিনদের নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি আওলা বা প্রিয়? লোকেরা বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি যার মাওলা এই আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ যে তাকে বন্ধু বানায় তুমিও তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তার সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। বিশ্ব মানবতা ও সংহতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সরকারী মাদরাসা-ই আলীয়া ঢাকার প্রিন্সিপাল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইরানের আল মুস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন ড. শাহবুদ্দিন মাশায়েখী রাদ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসানুল হাদী, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মুফতিয়া খানকাহ শরীফের গদিনিশীন আবুল উলাইয়্যা শাহ সুফি সারোয়ার মোস্তফা আবুলউলায়ী, ঢাকার বসুন্ধরায় অবস্থিত সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহ সুফি এইচ এম হানীফ নূরী, আহলে বায়েত গবেষক ও খতিব মাওলানা হাফেজ ফুয়াদ আল-মাহদী আল-ফারুকী, ভারতের মেদেনিপুর দরবার শরীফের খাদেম মাওলানা মুহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম ক্বাদেরী এবং বিশ্ব মানবতা ও সংহতি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী খান।
অনুষ্ঠানে অনুবাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইরানের আল মুস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ শাখার প্রশিক্ষণ ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক আলী নওয়াজ খান।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)