বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সাইবার জগতে শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধ বাড়ছে। বিশেষ করে যে শিশুরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করছে, জেনে না বুঝে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। সাইবার অপরাধ করা সহজ হলেও নতুন আইনে অপরাধীকে ধরা ও অপরাধ প্রমাণও কঠিন হয়ে গেছে।
সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় তাই ব্যক্তি পর্যায়েই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের কিছু ধারা সংশোধনের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (সিক্যাফ) অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক। সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী। অন্যদের মধ্যে সিক্যাফ সহ-সভাপতি এস এম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল মুনয়েম সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে বিটিআরসির (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যত সচেতনতা বাড়ানো যাবে ততই কমানোর সম্ভব এই সাইবার ক্রাইম। যারা ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। তবে এখনো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়নি। কারণ গ্রাহক পর্যায়ে আমরা স্মার্ট সোসাইটি বা স্মার্ট গ্রাহক তৈরি করতে পারিনি। এখনও অনেকে জানেন না তাদের এনআইডির বিপরীতে কয়টা সিম উত্তোলন করা হয়েছে। অজ্ঞাতসারে অন্য কেউ সিম ব্যবহার করছেন কি না এটা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের জানা উচিত। নতুন যে সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে, তার বেশ কিছু ধারার সংশোধন করা প্রয়োজন রয়েছে।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ. হুসেইন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এখন এর দক্ষ ব্যবহার দরকার। কিন্তু দেশে ৭০ শতাংশই সাইবার আক্রমণ হচ্ছে মানবিক ভুলে। তাই সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সাইবার হামলা এমন হয়ে গেছে যে, পিওর বলে আর কিছু থাকছে না। আমাদের সচেতনতার সঙ্গে দরকার অ্যাটেনশন। আর হাইটেক শব্দটা ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। তাহলে লো টেকের কী অবস্থা। ফোর্থ ইন্ড্রাসট্রিয়াল বিপ্লবের কথা শুনছি। রাস্তার লোককেও তো সেটা বলতে হবে, বুঝতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন খাতে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও সুবিধা এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার স্পষ্ট উন্নতি, যোগাযোগ ও সংযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অবদান। কৃষি ক্ষেত্রে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার মানব সভ্যতাকে অনেক মানবিক করে তুলবে। এই উন্নতির পাশাপাশি কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সাবধানে বিবেচনা করার দাবি করে। এই উদ্বেগগুলোর মধ্যে রয়েছে— সম্ভাব্য গোপনীয়তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি, প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি। উদীয়মান প্রযুক্তির সামাজিক সুবিধাগুলো সর্বাধিক করতে একটি বহুমুখী পদ্ধতি প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন নীতি ও বিধিমালা তৈরি করা।
মুশফিকুর রহমান আরও বলেন, পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বিকাশকে উৎসাহিত করা জরুরি। উদীয়মান প্রযুক্তির যুগে জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনা সর্বোপরি হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে, দেশীয় শিক্ষাগত গবেষণা, শিল্প ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং স্থানীয় সফ্টওয়্যার ও সমাধানের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতি কেবল প্রযুক্তি অর্জনে বিদেশি মুদ্রার ব্যয়ের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে না, বরং দেশীয়ভাবে তৈরি প্রযুক্তিগত সফ্টওয়্যার ও বিভিন্ন সলিউশনস রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়ে জাতীয় উন্নতিতে অবদান রাখবে ।
বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন বলেন, অনলাইন গ্যাম্বিলিংয়ের আড়ালে আছে মানিলন্ডারিং। তবে একে খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাইবার ক্রাইম করাটা খুব সহজ। কারণ যে কারো মোবাইল দিয়ে বা ডিভাইস দিয়ে সাইবার অপরাধটা হতে পারে। ক্রাইমের ধরণ আছে। কিন্তু সাইবার ক্রাইমে অপরাধী থেকে যায় আড়ালে।
কোর ব্যাংকিং খাতে সহসাই একটি বিপদ আসছে বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
ডিএমপির সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ৪টি ধারা ছাড়া সাইবার অপরাধ আইন ২০১৩-এর সবগুলো ধারাই হ্যাকিংয়ের আওতায় থাকলেও তা জামিনযোগ্য। এতে অনেক অপরাধীকে শাস্তির অধীনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা দেরিতে নালিশ করায় আইনের সুরক্ষা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। দেশে শিশু পর্ন বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা হচ্ছে। এটা শঙ্কাজনক।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও প্রধান গবেষক হুসেইন সামাদ বলেন, আগে ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন বলা হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। এর চারটি পিলার। স্মার্ট জনগণ/সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি। সাইবার সিকিউরিটি শুধু একজনের একটি সময়ের জন্য না। এটা অন গোয়িং গেম। এগিয়ে থেকেই প্রো অ্যাকটিভিটি দরকার। সাইবার সিকিউরিটির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট রাখতে হবে। ঘুরেফিরে সচেতনতাই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)