শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
চলতি অর্থবছরে বাজেটে আমদানিকৃত ফিনিশিড লুব্রিকেন্টস অয়েলের উপর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করায় ডলার পাচারের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লুব্রিকেন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লিয়াব) এর সভাপতি মোহাম্মদ জমসের আলী।
সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আমদানিকৃত লুব্রিকেন্টের উপর শুল্ক কমানোর দাবি জানানোর সময় এ কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ জমসের আলী বলেন, বাজার মূল্য থেকে শুক্লায়ন মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করার ফলে প্রতি মেট্রিকটন মিনারেল ১২০০ ডলার, সেমি সিনথেটিক ১৫০০ ডলার, সিনথেটিক ৩০০০ ডলার পাচার করার সুযোগ হয়েছে। এতে করে সরকারি সুবিধায় ওভার ইনভয়েসের সুযোগ থাকায় নিশ্চিতভাবে ডলার পাচার বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এইচএস কোড সংযোজন করায় এই খাতের ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবে।
তিনি বলেন, লুব্রিকেন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লিয়াব) লুব্রিকেন্টস আমদানিকারকদের একমাত্র বাণিজ্য সংগঠন। দেশে বার্ষিক প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন চাহিদার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ফিনিশড লুব্রিকেন্টস জোগান দিয়ে আসছে এই সংগঠনের সদস্যরা। এই সেক্টরের আমদানিকারকরা প্রতি বছর রাজস্বখাতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রাখছে।
লিয়াব সভাপতি বলেন, গত অর্থবছরে বাজেটে সকল প্রকার ফিনিশড লুব্রিকেন্টস একই এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.৩১। যার শুল্কায়ন মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ২ হাজার ডলার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে আগের এইএস কোড এর সাথে আরো নতুন দুইটি এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.২০ ও ৩৪.০৩.৯৯.৩০ সংযোজন করা হয়েছে। এই সংযোজিত ৩৪ সিরিয়াল এইচএস কোড আন্তর্জাতিক বাজারের প্রচলিক ফিনিশড লুব্রিকেন্টস এইচএস কোডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বাজেটে এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.৩১ মিনারেল প্রতি মেট্রিক টন ২৫০০ ডলার এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.২০ সেমি সিনথেটিক প্রতি মেট্রিক টন ৩২০০ ডলার এবং এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.৩০ সিনথেটিক প্রতি মেট্রিক টন ৫ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত মিনারেল, সেমি সিনথেটিক ও সিনথেটিক লুব্রিকেন্টসের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রকৃত মূল্য ১৬০০, ১৭০০, ২০০০ ডলার। সেই হিসেবে মিনারেল লুব্রিকেন্টস শুল্কায়ন মূল্য ৫৭ শতাংশ, সেমি সিনথেটিক ৮৯ শতাংশ ও সিনথেটিক লুব্রিকেন্টস ১৫০ শতাংশ আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (ট্যারিফ) নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজার মূল্য থেকে শুল্কায়ন মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করার ফলে প্রতি মেট্রিক টনে ১২০০, ১৫০০ ও ৩০০০ ডলার পাচার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সরকারি সুবিধায় ওভার ইনভয়েসের সুযোগ থাকায় নিশ্চিতভাবে ডলার পাচার বাড়বে।
তিনি বলেন, লুব্রিকেন্টস মূল্যবৃদ্ধি হলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সকল নিত্যপণ্য সামগ্রীতে। ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের কাঁচামাল হচ্ছে বেইজ অয়েল এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.২১। এ বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০০ ডলার। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২৫০-৩০০ ডলার যোগ করলেই ফিনিশড লুব্রিকেন্টস তৈরি হয়। সেই ক্ষেত্রে ফিনিশড লুব্রিকেন্টস এর আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (ট্যারিফ) ২৫০০, ৩২০০ ও ৫০০০ ডলার নির্ধারণ সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অযৌক্তিক।
মোহাম্মদ জমসের আলী বলেন, ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের উপর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের ফলে পরিবহণ, শিল্প, কলকারখানা, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট, কৃষি উৎপাদন, গার্মেন্টস শিল্পে খরচ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সরকারের বর্তমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে। এছাড়া পরিবহণ, শিল্প, কলকারখানা, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট, কৃষি উৎপাদন, গার্মেন্টস শিল্প এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রজেক্টগুলোতে ব্যবহৃত অতীব মূল্যবান ও ব্যয়বহুল মেশিনারিজের ইঞ্জিনগুলোতে অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফেকচারার এর অত্যাবশকীয়ভাবে সুপারিশকৃত। উচ্চমানের লুব্রিকেন্টস বাজারে না থাকলে এই প্রজেক্টগুলো অচিরেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গত জুন মাসে এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআই এই অযৌক্তিক শুল্কায়ন মূল কমানোর দাবিতে পৃথকভাবে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,আমরাও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এনবিআর কর্মকর্তাদের এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়েরে সাথে দেখা করে সমস্যার চিত্র তুলে ধরে চিঠি প্রেরণ করি এবং সমাধান দাবি করি। কিন্তু বাজেট ঘোষণায় দেখা যায় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এনবিআর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এনবিআরের এই অস্বাভাবিক শুল্কায়ন মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই সেক্টরের শত শত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এর সাথে জড়িত হাজার হাজার কর্মচারীেরে চাকুরিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
লুব্রিকেন্টস সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধ, বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা, পরিবহণ, শিল্প, কলকারখানা, বিদ্যুৎ, পাওয়ার প্লান্ট, কৃষি উৎপাদন, গার্মেন্টস শিল্প খাতে মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ন্যায্যতার জন্য ফিনিশড লুব্রিকেন্টস অয়েলের উপর ২০২৪-২৫ বাজাটে মূল্যের অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ২ হাজার ডলার নির্ধারণ করে এই সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।
লুব্রিকেন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লিয়াব) সভাপতি মোহাম্মদ জমসের আলীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি মোবারক আলী, পরিচালক আবুল কাশেম, দেলোয়ার হোসেন, আসলাম পারভেজ, মনোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন ও আবু সাঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)