সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের রুবিনা আক্তার (২৪) ময়মনসিংহের একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। ছয় মাস আগে ফেসবুকে খুলনার এনামুল সানা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাকে বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভনে আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে আসেন সানা। এরপর ফুসলিয়ে কয়েক দিন রাখেন রুবিনাকে। এসময় রুবিনা এনামুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিন্তু এনামুল রাজি হন না। এক পর্যায়ে রুবিনাকে বালিশচাপায় হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এনামুল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মাথায় তাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এনামুল।
র্যাব এনামুল সানার (২৭) পাশাপাশি তার সহযোগী সোহাগ রানাকে (২৮) গ্রেফতার করেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ৯ ডিসেম্বর আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র্যাবকে জানায়। পরে সেই লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় মেলে সেই নারীর নাম রুবিনা আক্তার। তিনি দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছের মেয়ে। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করে সে সময় জানতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার আলামতের সূত্র ধরে কথিত প্রেমিক এনামুল সানাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল জানিয়েছেন, রুবিনার সাথে তার ছয় মাস আগে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এনামুল বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি রুবিনার কাছে গোপন রাখেন। চলতি মাসে এনামুলের বৌ-বাচ্চা খুলনার গ্রামের বাড়িতে চলে গেলে তিনি রুবিনাকে বেশি বেতনে আশুলিয়ায় চাকরি নিয়ে দেবেন প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে আনেন। এরপর তাকে আটকে রাখেন। রুবিনাকে সাভারে নিয়ে আসার আগে তিনি একটি গার্মেন্টসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন। তবে রুবিনা এসে দেখতে পান তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এসময় তিনি এনামুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ গুমের জন্য রুবিনার হাতে থাকা মেহেদীতে লেখা এনামুল নামটি আগুনে পুড়ে মুছে দেন। এরপর রাত তিনটার দিকে গ্রেফতার সোহাগকে নিয়ে রুবিনার লাশটি চাদরে মুড়িয়ে বংশাই নদীতে ফেলে দেন। এই কাজে সোহাগ তাকে নানাভাবে সাহায্য করেন। তারা রুবিনার লাশটি ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন।
র্যাব জানায়, এনামুল ছয় বছর আগে খুলনা থেকে ঢাকায় এসে আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারসহ বসবাস করে আসছিলেন। তিনি কোনো এক সময় গার্মেন্টসের সুপারভাইজারের চাকরি করতেন। বর্তমানে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালান। সাত থেকে আট মাস আগে নারীকেন্দ্রিক ঘটনায় এলাকাবাসী তাকে আগের বাসা থেকে বিতাড়িত করে। এছাড়াও তিনি একাধিক নারীঘটিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারিসংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার সোহাগ দুই বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি পেশায় বাসের হেলপার। এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় যাবতীয় অপকর্মে পাশে থাকতেন। তিনি ইতঃপূর্বে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় এক মাস কারাভোগ করেন।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার দুজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)