বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
একটি সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো তার বাবা-মা। সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে জীবনযাপনের প্রতিটি মুহূর্তে তারা যেন এক ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের গুরুত্ব অপরিসীম, তেমনি সন্তানের জন্যও বাবা-মা সর্বোচ্চ গুরুত্বের। কিন্তু সমাজে এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা বাবা-মায়ের ছায়া তো দূরের কথা, বাবা-মাকেও কখনো দেখতে পায়নি বা তাদের ভালোবাসা অনুভব করতে পারেনি।
অযত্নে ও অবহেলায় বেড়ে উঠা আমাদের সমাজের অনেক এতিম, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে, যারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দান করা স্নেহের পাশাপাশি তাদের নিজ ঠিকানাও খুঁজে পায়নি। তারা তাদের অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সেই সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের বাবা-মায়ের মতো আদর-ভালোবাসা দিয়ে নতুন ঠিকানা দিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।
অযত্নে বেড়ে উঠা ৫০টি এতিম, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু পেয়েছে নতুন ঠিকানা, চাঁদপুরের শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সরকারের নির্দেশনায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সহযোগিতায় এবং জেলা সমাজসেবার তত্ত্বাবধানে, এই মাসে উদ্বোধন হয়েছে ১০০ শয্যার সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা)। এখানে অসহায় ও এতিম শিশুদের যেন নিজ ঠিকানা পাওয়া, সাথে তারা পাচ্ছে সব ধরনের সুবিধা এবং তাদের অধিকারও নিশ্চিত হচ্ছে।
নতুন ঠিকানা পাওয়া শিশুদের মধ্যে ছোঁয়া আক্তার, মীম, সামিয়া, ফাহমিদা ও রীমা আক্তারের সাথে কথা হয়। তাদের বয়স ৮-১২ বছর। তারা মিষ্টি হাসিমুখে প্রতিবেদককে জানায়, ‘এখানে সবাই আমাদের আদর দেয়, খেলতে দেয় এবং পড়াশোনা করতে দেয়। আগে এসব কিছুই পেতাম না। এখানে অনেক বন্ধু পেয়েছি। আমরা একসাথে পড়াশোনা করতে পারি। এখানকার সবাইকে ভালো লাগে।’
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে উপ-প্রকল্প পরিচালক সৈয়দা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিটি শিশুকে অত্যন্ত যত্নসহকারে পরিচর্যা করি। তাদের বেড়ে ওঠার প্রতিটি সময় আমরা খেয়াল রাখি যাতে কোনো ধরনের কমতি না হয়।’
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ‘সমাজে অনেক শিশু রয়েছে যারা বাবা-মায়ের আদর ছাড়াই বেড়ে ওঠে, তাদের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি এসব শিশুর অভিভাবক হিসেবে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানে শুধু তারাই থাকতে পারবে যাদের বাবা-মা বা নিকট আত্মীয় নেই। যারা বাবা-মা ছাড়াও নিকট আত্মীয়দের কাছে থাকতে পারে, তাদের আমরা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সেগুলোর কাছে দিতে পারব। প্রয়োজনে আমরা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করব। আমরা চাই তারা তাদের পরিবার থেকে অভিভাবকত্ব পায়।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন বলেন, ‘আসলে আমরা চাই না সমাজে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকতে। কারণ বাবা-মায়ের ভালোবাসা এবং স্নেহ কেউ পূরণ করতে পারে না। যে শিশু তার বাবা-মাকে হারায়, সে জানে তার অনুভূতি কী। বাবা-মা ছাড়া আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বেড়ে ওঠা এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড়ে ওঠার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সমাজে অনেক শিশু রয়েছে যারা অবহেলায় বেড়ে ওঠে এবং তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এই প্রতিষ্ঠানটি সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশু এবং এতিম শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।’
# মির্জা সাইমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)