বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
বাবার সঙ্গে চায়ের দোকান সামলেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন মুন্সীগঞ্জের মো. রিফাত বেপারী।
তিনি মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের মজিদপুর এলাকার মো. ইউনুস বেপারীর ছেলে। ইউনুস বেপারী কেয়াইন কাউয়ামারা বাজারের একজন চা বিক্রেতা।
রিফাত সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ৩২৩তম স্থান অর্জন করেছেন।
মো. রিফাত বলেন, ভবিষ্যতে আমি কার্ডিওলজি নিয়ে পড়তে চাই। অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার থেকে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ ছিল আমার। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করেছি, দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। এতে আমার কখনো খারাপ লাগেনি। শুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। অভাবের কারণে নিজ গ্রামের শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করি। এরপর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২৪ সালে আবার জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করি। অর্থের অভাবে অন্য সহপাঠীদের মতো কোচিং করতে পারিনি। কিন্তু পড়াশোনা থেকে সরে যাইনি।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বলেন, রিফাত খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে মেডিকেলে ভর্তির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে। সম্পূর্ণ নিজের মেধা ও চেষ্টায় রিফাত মেডিকেলে পড়ার চান্স পেয়েছে। রিফাত তার বাবার সঙ্গে চা ও ভাজাপুড়িও বিক্রি করেছে। তারা খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। সে পরিবারের ছোট ছেলে। তার আরও এক ভাই রয়েছে। তাদের পরিবারে খুবই অস্বচ্ছল।
রিফাতের বাবা ইউনুস বেপারী বলেন, ছোট টিনের ঘর ও ভিটা ছাড়া কিছুই নেই আমাদের, অভাবের সংসার। আমার রিফাত জীবনে কোনো দিন কোনো কিছুর জন্য বায়না করেনি। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা খুবই ভালো, পড়তে বলা লাগেনি। চায়ের দোকানে এসে কাজ করেছে আবার পড়াশোনাও করেছে। দোকানে বসে পুরি-সমুচা বানিয়েছে, বিক্রি করেছে। রিফাত ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ায় আমরা খুব গর্বিত। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
রিফাতের মা ঝর্না বেগম বলেন, আমার বড় ছেলেকে অভাবের কারণে পড়াতে পারিনি। ছোট ছেলে অভাবের মধ্যেই পড়ালেখা করেছে। ছেলে বড় ডাক্তার হোক। আমি খুবই আনন্দিত।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন, মো. রিফাত বেপারী হচ্ছে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় রিফাতকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এছাড়া তার মেডিকেলে পড়তে সবসময় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে। রিফাতের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)