শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
পরিবারের অমতে ভালোবেসে সংসার পেতেছিলেন মাহমুদুল হাসান। তিনি থাকতেন বাড়ি থেকে দূরে গাজীপুরের টঙ্গীর মীরের বাজার এলাকায়। চার মাস আগে ঘর আলো করে জন্ম নেয় ছেলেসন্তান। সেই সন্তানের জন্য দুধ গরম করতে গ্যাসের চুলা ধরাতে গিয়ে বিস্ফোরণে শেষ হয়ে যায় মাহমুদুলের ভালোবাসার সংসার।
৩ আগস্ট ভোরে মীরের বাজার এলাকার একটি বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বাসার অন্য ভাড়াটেরা শিশুসহ তিনজনকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক শিশু রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার রাতে মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী হাফিজা খাতুন (২০) ও গত বৃহস্পতিবার ভোরে মাহমুদুল মারা যান। শিশু রায়হানকে ৩ আগস্ট ও স্বামী–স্ত্রীকে গতকাল শুক্রবার পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।
নিহত মাহমুদুল হাসান (রিপন) ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চারিয়া ঘোষপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে। তিনি পাশের কান্দাবাড়ি গ্রামের হাফিজা খাতুনকে (২০) ভালোবেসে দেড় বছর আগে বিয়ে করেন। পরিবার মেনে না নেওয়ায় গাজীপুরের মীরের বাজার এলাকায় বসবাস শুরু করেন। মাহমুদুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। হাফিজা ছিলেন গৃহিণী। পরে পরিবার বিয়ে মেনে নেয়। চার মাস আগে শিশু রায়হানের জন্ম হয়। একটি দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পৃথক অ্যাম্বুলেন্সে মাহমুদুল ও হাফিজার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাহমুদুলের বাবা লিটন মিয়া ও মা সেলিনা খাতুন সন্তানের শেষবিদায়ের আগে আহাজারি করেন। লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার আগে সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু দেখতে হবে, কোনো দিন ভাবি নাই। আগুনে সব শেষ কইরা দিছে।’
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চারিয়া ঘোষপাড়া ঈদগাহ মাঠে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে স্বামী–স্ত্রীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে সন্তানের পর মা–বাবাকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘এমন মর্মান্তিক মৃত্যু আর হয় না। একসঙ্গে পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা এলাকার মানুষ আগে কখনো দেখেনি।’
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)