শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
পিটুইটারি গ্লান্ড এক ধরনের ছোট গ্রন্থি, যা শরীরের বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই গ্রন্থিটি মাছের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বছরে মাছকে একাধিকবার ডিম ছাড়ার সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।
মাছের মস্তিষ্কের পাশে থাকা ছোট্ট এই গ্রন্থিটি প্রক্রিয়াজাতকরণ করার পর প্রতি কেজির বাজারমূল্য হয় এক কোটি টাকারও বেশি। আর এ অমূল্য সম্পদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেশজুড়ে আলোচিত যশোরের চৌগাছা উপজেলার বিএম নেওয়াজ শরীফ।
রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাস, শিং, মাগুর, বোয়াল ইত্যাদি কার্প জাতীয় মাছের মাথার পেছনের অংশে থাকা এই পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন হ্যাসারিতে সরবরাহ করছেন তিনি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৎস্য বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সফল উদ্যাক্তা হওয়ার পথে হাঁটছেন নেওয়াজ।
সাধারণত মাছ কাটার সময় এই অঙ্গটি ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই অংশটিই মৎস্যখাতে সোনার খনি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্লান্ড থেকেই কৃত্রিম প্রজননের জন্য অত্যাবশ্যক হরমোন তৈরি হয়, যা বিশেষ করে ফিস হ্যাচারি, ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ ও অ্যাকুয়া টেক কোম্পানিতে ব্যবহৃত হয়। প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬ লাখ পিস গ্লান্ড থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চৌগাছার ফুলসারা ইউনিয়নের নিমতলায় জেএসএল এগ্রা ফিসারিজ নামে একটি পরীক্ষাগার স্থাপন করেছেন নেওয়াজ শরীফ। বিভিন্ন মাছবাজারের বটিওয়ালাদের (মাছ কাটার কাজ করেন যারা) কাছ থেকে সংগ্রহ করেন পিটুইটারি গ্লান্ড। সেখানেই শুরু হয় মাছের মাথা থেকে পিটুইটারি গ্লান্ড সংশোধন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া। পরে সেগুলো দেশের বিভিন্ন হ্যাচারিতে বিক্রি উপযোগী করা হচ্ছে। বর্তমানে ল্যাবে কয়েক লাখ টাকার হরমোন উৎপাদন করছেন তিনি এবং লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
নেওয়াজ শরীফ বলেন, শুরুতে ৬-৭ লাখ টাকার বিনিয়োগ করেছি। এখন প্রতি মাসে অর্ধলাখ টাকা লাভ করছি। এটা সবে শুরু। সামনে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। দেশে নিবন্ধিত হ্যাসারির সংখ্যা প্রায় ৯৬৪টি। এসব হ্যাসারিতে বছরে প্রায় ৩৫-৪০ কেজি হরমোনের প্রয়োজন হয়। যা পুরোটাই আমদানি নির্ভর। অথচ এই হরমোন যদি দেশেই প্রক্রিয়াজাত করা যায় তাহলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
নেওয়াজ শরীফ আরও বলেন, এই বিশাল মৎস্য সম্ভাবনাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে একদিকে যেমন আমাদের দেশের মৎস্য সেক্টর উন্নত হবে অপর দিকে যারা মাছ কাটেন তাদেরও ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।
এদিকে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএফ) সহায়তায় সম্ভাবনাময় এ খাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন। তাদের পরিকল্পনা দেশের প্রতিটি বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহে সক্ষমতা গড়ে তোলা।
যশোর বড় বাজারের বটিওয়ালা খানজাহান আলী বলেন, মাছের মাথা থেকে পিটুইটারি গ্লান্ড অনেক আগে থেকেই সংগ্রহ করি। এক একটি মাছের মাথা থেকে দুই পিস সংগ্রহ করা যায়। প্রতিপিস ৪ টাকা থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এতে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।
শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনের মংস্য কর্মকর্তা জামিল হুসাইন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ২৫ জন বটিওয়ালাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহের সম্ভাবনাময় এ খাতকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি।
সরকার মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, মাছের মাথার ফেলে দেওয়া অংশ থেকে এই পিজিগুলো সংগ্রহ করা হয়। পিজি আমদানি কমাতে পারলে দেশ উপকৃত হবে।
তিনি আরও বলেন, চৌগাছা মৎস্য অফিস ইতোমধ্যে তরুণ উদ্যোক্তা নেওয়াজ শরীফের ল্যাব পরিদর্শন করেছে। সরকারিভাবে আমরা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এই খাতকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)