শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
স্ত্রীকে তালাক দিয়ে প্রায় ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে সাইফুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি ছেলেকে নিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে এটিকে উদযাপন করেছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাটিকামারী দরগাপাড়া গ্রামে।
স্থানীয়রা বলেছেন, দাম্পত্য জীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসা দুঃখজনক। তালাক পরবর্তী এমন ব্যতিক্রমী আচরণে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি তার ছেলে মিনহাজ শেখকে (১০) নিয়ে প্রকাশ্যে দুধ দিয়ে গোসল করেন।
জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম বাটিকামারী বাজারে সিমেন্ট, বালুসহ স্যানিটারীর ব্যবসা করেন। আর স্ত্রী রোজিনা বেগম গৃহিনী।
সাইফুল ২০১৪ সালে ভাঙ্গা উপজেলার ছোট মুসকুন্নি গ্রামের রোজিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের দুই বছর পর ২০১৬ সালে এ দম্পত্তির একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগের দাম্পত্য জীবনে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবরিক অশান্তিতে তাদের মধ্যে তিক্ততা বাড়তেই থাকে। এরমাত্রা চরম আকার ধারণ করে।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সাইফুল বলেন, “আমার দুই বোন ও মা-বাবা আছেন। দু’বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী আমার ছেলেকে প্রায়ই মারপিট করত। বিয়ের পর থেকে আমি তার অত্যাচার নির্যাতনে তটস্থ থাকতাম। আট মাস আগে স্ত্রীর চাপে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাই। অশান্তির মধ্যে আমরা বাবা-ছেলে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাছিলাম। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠি। সংসার থেকে শান্তি নির্বাসনে চলে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “গত ৩১ জুলাই স্ত্রী আমাকে মারপিট করে। ওইদিন সে উল্টো আমি, আমার মা ও দুই বোন তাকে মারপিট করেছি বলে মুকসুদপুর থানায় মিথ্যা অভিযোগ দেয়। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ। তিনি ৪ আগস্ট আমাদের দু’পক্ষের কথা শোনেন। ১৫ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য দু’পক্ষ সময় চান। ১৫ আগস্ট পুলিশ ব্যস্ত ছিল। পরে মুকসুদপরের একটি হোটেলে দু’পক্ষের লোকজন বসেন। সেখানে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ির সমঝোতা হয়। এসংক্রান্ত আপস-মীমাংসা করে দুপক্ষের সই করা কাগজ ওই এসআই’র কাছে শুক্রবার রোজিনা জমা দিয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে সংসার জীবনের বিভীষিকাময় এক যুগের অধ্যায়ের অবসান হয়েছে। এ অধ্যায় থেকে মুক্তির আনন্দে শনিবার ছেলেকে নিয়ে আমি দুধ দিয়ে গোসল করেছি।”
তবে এ ব্যাপারে স্ত্রী রোজিনা বেগম সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
বাটিকামারী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বর বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ির কথা আমি শুনেছি। দুধে গোসল করে দাম্পত্য জীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসা দুঃখজনক। আমি এটিকে ধিক্কার জানাই। বিষয়টি খারাপ হয়েছে।”
মুকসুদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “রোজিনা বেগম মারপিটের অভিযোগ আনেন স্বামী, শ্বাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দু’পক্ষ বসে আপস মীমাংসা করেছে। আপস মীমাংসার কাগজ আমার কাছে ওই নারী জমা দিয়েছেন।”
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)