সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
যশোর পৌর পার্ক থেকে তুলে নিয়ে দুই যুবককে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, টিএসআই রফিকুল ইসলামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। পিরোজপুর জেলায় কোটি টাকার সম্পত্তি জবর-দখলকে কেন্দ্র করে পূর্ববিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়া গ্রামের কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি ‘গুম হওয়া’ যুবক সাইদুর রহমানের বাবা। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহমত আলী মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য আসামিরা হলেন, যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমারখালী গ্রামের মৃত শ্যাম হাওলাদারের ছেলে ফুলু মিয়া, মৃত হাকিম শেখের দুই ছেলে রমিজ ও নাসির, মৃত আব্দুল হাই শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম, মৃত আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে হারুন অর রসিদ, মৃত সেলিম শেখের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আল আমিন।
কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন মামলায় বলেছেন, তার ছেলে সাইদুর রহমান ওরফে সাইদ লেখাপড়া করতো। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল। সে কারণে তার প্রতি তৎকালীন সরকারের দমন-নিপীড়ন আচরণ ছিল। অন্য আসামিরা পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং পদস্থ ছিল। ৪ থেকে ১০ নম্বর আসামিরা তার (বাদীর) পিরোজপুরের কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি জবরদখল করে নেয়। লোকমারফত বিষয়টি জানতে পেরে তার ছেলে সাইদকে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে পাঠায়। সেখানে গিয়ে তারা সম্পত্তি জবরদখলের ব্যাপারে আসামিদের সঙ্গে কথা বলে। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেকে জীবন শেষ করার হুমকি দেয়। বিষয়টি যশোরে সাইদ তার মাকে জানায়।
মামলায় বাদী জানান, ৫ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে বন্ধু শাওনকে সাথে নিয়ে যশোর পৌরপার্কে ঘুরতে যায় সাইদ। এ সময় তৎকালীন যশোরের এসপি আনিসুর রহমানের নির্দেশে টিএসআই রফিকসহ অন্য সকলে পৌরপার্ক থেকে সাইদ ও শাওনকে তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরে কোতোয়ালি থানায় গেলে তৎকালীন ওসি বলেন টিএসআই রফিক ওই দুইজনকে এখনও থানায় সোপর্দ না করে সদর ফাঁড়িতে নিয়ে গেছে। এরপরে সদর ফাঁড়িতে এসপির নির্দেশে টিএসআই রফিক ও কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা সাইদ ও শাওনকে আদালতে সোপর্দের কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে সোপর্দ না করায় বাদীর স্ত্রী তৎকালীন এসপি আনিসুর রহমানের কাছে যান। এসপি এ সময় ওই দুইজনকে সামনে পেলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। একই সাথে সাইদের মাকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করেন। পরে সাইদের মা বাদী হয়ে টিএসআই রফিক, গোলাম মোস্তফা এবং আল-আমিনের নামে আদালতে মামলা করেছিলেন। ওই সময়ে সাইদের মাকে শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে আটকে রেখে মারপিট করে। এরপর এসপি আনিস তার অফিসে ডেকে নিয়ে সাইদের মাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। আহত অবস্থায় কিছুদিন পরে সাইদের মা মারা গেছেন। আজ অবধি সাইদ ও তার বন্ধু শাওনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাদীর দাবি, তাদের হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়েছে। সে সময় আসামিরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি তিনি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় ঘটনার আট বছর পর আদালতে মামলা করেছেন।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)