রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২
ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৬ বছর গুম-খুন-হত্যা করেছে। এদেশের নিরীহ মানুষদেরকে হাজার হাজার মামলা দিয়ে, লাখ লাখ মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে, নিপীড়ন করেছে। তার প্রত্যেকটি বিচার হবে ইনশাআল্লাহ এই বাংলার মাটিতে।
তিনি বলেন, বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিচার শুরু হয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার, এখন তার দোসরদের বিচার শুরু হয়েছে। বিচার চলবে। এই ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। প্রসিকিউশন বৃদ্ধি করা হবে। তদন্ত টিমের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। প্রত্যেকটি অপরাধের বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনের প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে কেউ কেউ বলছে বিচার ছাড়া নির্বাচন হবে না। কেউ কেউ বলছে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না। কেউ বলছে এটা না হলে নির্বাচন হবে না, কেউ বলছে ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। বিচার আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। যারা গণহত্যা করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের নেতা তারেক রহমান, নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশের সংস্কারের প্রবক্তা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের প্রবক্তা। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মতো একটি আধুনিক গ্রহণযোগ্য ফর্মুলার প্রবক্তা।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে যারা সংস্কারের কথা বলে, তারা কি জানে ভিশন টুয়েন্টি থার্টির কথা? আমরা যেটা ২০০৭ সালে দিয়েছিলাম। আমাদের নেত্রী দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে ২০২২ সালে ২৭ দফা সংস্কারের কথা। তার ভিত্তিতে সমস্ত আন্দোলনকারী দল-সংগঠনগুলোকে আমরা ধারণ করে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি। যে ৩১ দফা তারেক রহমানের ৩১ দফা, বাংলার ঘরে ঘরে তা পৌঁছে গেছে। আজকে আমাদের ৩১ দফা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মহাকাব্যের নাম। বাংলাদেশের ৩১ দফার কথা বললেই সারা পৃথিবীর মানুষ জানে কারা দিয়েছে, কী চায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৩১ দফার কথা কিন্তু সমস্ত জনগণের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আরও বেশি যদি আমরা সংস্কার প্রস্তাব পাই, বাংলাদেশের মানুষের যদি উপকৃত হয় তখন আমরা সেটা ধারণ করব। যদি দেশের যে কোনো নাগরিক ৩১ দফার সঙ্গে কিছু সংযুক্ত করতে চায় আমরা সেটা ধারণ করব। সেজন্যই আমরা বলি আমরা সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সংস্কার আজকে শেষ হবে না। সংস্কার শুরু হয় আর কখনো শেষ হয় না। সংস্কার শুরু করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। শুরু করেছিলেন এদেশের বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে, সংস্কার শুরু করেছিলেন খাল খননের মধ্য দিয়ে।। সংস্কার শুরু করেছিলেন বিচারবিভাগের মধ্য দিয়ে। সংস্কার শুরু করেছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির ইতিহাস বাংলাদেশের সংস্কারের ইতিহাস। বিএনপির রাজনীতির ইতিহাস সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ধারণাকে ধারণ করার ইতিহাস। বিএনপির ইতিহাস এদেশের সংস্কারের মধ্য দিয়ে যুগোপযোগী রাজনীতি চালুর ইতিহাস।
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বর্ণনা মতে- ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে এদেশের মানুষের সম্পদ ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর গড় পর্যায়ে দুই লাখ কোটি টাকার বেশি। শ্বেতপত্রের মতে- কর ফাঁকি, কর মওকুফ, রাজস্ব ফাঁকির মধ্য দিয়ে যে টাকা তছরুপ করা হয়েছে তা দিয়ে বাংলাদেশের ন্যূনতম ১০টি পদ্মা সেতু করা যেত।
ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আজকে বলছে ইসলামের জন্য একটি আলাদা বাক্স বসাই দেখি ওখানে কী হয়। কারা এই স্লোগানগুলো দিচ্ছে আপনারা বুঝে নেন। ইসলাম কোনো কোটা রাজনীতি নয়। ইসলাম কোনো রাজনীতির বাক্স নয়। আমরা সবাই বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি। রাজনীতি দিয়ে ইসলামকে বিভক্ত করতে চায় যে শক্তি সেই শক্তিকে আপনারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন ব্যালটের মাধ্যমে। যারা একটি কিতাব নিয়ে গ্রামেগঞ্জে যাচ্ছেন । জান্নাতের টিকিট নাকি তারা বিক্রি করতে চায়। জান্নাতের টিকিট কি বিক্রি করা যায়? যারা জান্নাতের টিকিট বিক্রি করতে চায় তারা তো ধর্ম ব্যবসায়ী। এই দেশে ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা চলবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই দেশে একাত্তরের চেতনার ব্যবসা করতে করতে হাসিনা দিল্লির আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে করদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে ওখানে আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা বলে থাকি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আশা করছি তাদের সমাপ্তিও ওখানে হবে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া সুমনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বিএনপি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম প্রমুখ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)