মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২
ফাইল ছবি
জনবল সঙ্কটে ভুগছে ময়মনসিংহ জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। এ সুযোগে উচ্চমূল্যের চিকিৎসা সেবায় পকেট ভারি হচ্ছে ব্যাক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের।
তবে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজাতে জনবল নিয়োগসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা।
সূত্র জানায়, ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী জেলা ময়মনসিংহ। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী এই জেলার জনসংখ্যা ৫৮ লাখ ১ হাজার ১৮৭ জন। এর বিপরীতে জেলার ১৩টি উপজেলার ১১টি সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একটি মা ও শিশু হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্টানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল। এ কারণে সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা।
জেলায় শূন্যপদ ৮৪৮টি
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৩ হাজার ২৮৪টি। এর বিপরীতে ২ হাজার ৪৩৬ পদে জনবল বর্তমানে কর্মরত থাকলেও শূন্য রয়েছে ৮৪৮টি মঞ্জুরীকৃত পদ। এসব শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য সহকারী, সিনিয়র স্টাফ নার্স, পরিসংখ্যানবিদ, ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট, অফিস সহায়ক, স্টোর কিপার, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এবং গাড়ি চালক।
ঢেলে সাজাতে চিকিৎসকদের বদলি ও পুনর্বিন্যাস
২০২৪ সালের ৪ মার্চ জেলার সিভিল সার্জন হিসাবে যোগদান করেছিলেন সদ্য ওএসডি হওয়া ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি স্বাস্থ্যবিভাগকে ঢেলে সাজাতে গ্রহণ করেন নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি চিকিৎসক ঘাটতি পূরণেও সক্রিয় ভূমিকা রাখা। ফলে বিগত এক বছরে যেসব উপজেলায় চিকিৎসক অপেক্ষাকৃত বেশি রয়েছে সেখান থেকে কিছু চিকিৎসক বদলি করে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হয়। এতে ৫ জন মেডিকেল অফিসারকে সমঝোতার ভিত্তিতে বদলি এবং ১৮ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে পুনর্বিন্যাস করা হয়। বর্তমানে জেলায় মোট উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রয়েছে ২১৯ জন। সেই সঙ্গে ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত থাকা প্রায় ১২ জন চিকিৎসকের সংযুক্তি বাতিল করে ফেরত আনা হয়েছে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এছাড়া আরও কিছু চিকিৎসকের সংযুক্তি বাতিলের কাজ প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
পদ সৃষ্টি না করেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন
২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়। এতে জরুরি ও বর্হিবিভাগ চালু হলেও এখনো আন্তঃবিভাগের সেবা চালু হয়নি। প্রায় ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না আন্তঃবিভাগ। ইতোমধ্যে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ৩২টি পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে ১০ জনের জন্য আবেদন করা হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাত্র ৪টি পদ অনুমোদন পায়। তবে এই ৪ জনের মধ্যে গাইনি, সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়ার চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও মেডিসিনের চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেলে সংযুক্তিতে আছেন। এছাড়া ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ১৯ জন মেডিকেল অফিসার দরকার থাকলেও অনুমোদন হয় মাত্র ২টি পদ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গত ১৯ অক্টোবর ওএসডি হওয়া সিভিল সার্জন মো. ছাইফুল ইসলাম খান বলেন, পদ সৃষ্টি না করেই বিগত সরকার এসব প্রতিষ্ঠান চালু করে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে পদ সৃষ্টির জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পদ অনুমোদন ও চিকিৎসক বরাদ্দ পেলেই ইনডোর সার্ভিস চালু করা হবে।
২৬১ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ২০১৮ সাল থেকে ২৬৮টি তৃতীয় শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও বিগত সরকারের বেখায়ালিপনায় শেষ পর্যন্ত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আর সম্পন্ন হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের চলমান জনবল কাটিয়ে তোলার চেষ্টায় চলতি বছরের ১০ আগস্ট ২৬১টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহ্বার করা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য সহকারী ২৩১, পরিসংখ্যানবিদ ৭, ল্যাবরেটরি অ্যাসিটেন্ট ৩, স্টোর কিপার ১২, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেট ৫ এবং গাড়িচালক ৩ জনসহ মোট ৬টি পদে আবেদন চলমান আছে। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে আবেদনকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চলমান জনবল সঙ্কট অনেকটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না গেলে তা চিরতরে বাতিল হয়ে যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনবল সঙ্কটে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ইশরাত জামান। তিনি বলেন, জনবল সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও সঙ্কট কাটবে বলে আশা করছি। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সঙ্কট দ্রুত কেটে যাবে। ইতোমধ্যে ৪৮তম বিবিএস’র ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা কিছু চিকিৎসক পাব বলেও আশা করছি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)