শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ক্যাম্পের কাঁটাতার কেটে পালিয়ে যাচ্ছেন উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গারা।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক ঘণ্টার চেষ্টায় চেকপোস্ট বসিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে আটক করা হয়েছে ৪০ রোহিঙ্গাকে।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, ক্যাম্পে কাঁটাতার কেটে রোহিঙ্গারা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি চালিয়ে ৪০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের কুতুপালংস্থ ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মূলত কাজের সন্ধানে তারা নানা উপায়ে ক্যাম্প ছাড়ছেন।
এপিবিএন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে চলতি মাসে ৫১১ জন রোহিঙ্গা আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা মূলত প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এপিবিএনের পক্ষ থেকে তাদের বারবার সজাগ করা করেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সরকারি সেনা ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর ৩৩০ সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের সংখ্যা ছিল বেশি। এছাড়া সে দেশের সেনাবাহিনী, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পুলিশ ও কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন। আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জনকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে প্রাণ বাঁচাতে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এতে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অবস্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি।
ছয় বছরের বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে সব চেষ্টাই চালিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে বারবার। মিয়ানমারও বিভিন্ন সময় আশ্বাস দিয়ে, দিনক্ষণ ঠিক করে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। বিশাল এই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য এখন বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফেরানোর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সংকটে নিজেরাই জর্জরিত। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)