শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিকে নিয়ে সোমবার রাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করবে। রাত পোহালে মঙ্গলবার বিকেলে সদরঘাট জেটিতে অপেক্ষা করবেন নাবিকদের পরিবার। সেখানেই তাদের বরণ করে নেবেন পরিবারের সদস্যরা।
নাবিকদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। ৬৪ দিন পর জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নাবিকরা ঘরে ফিরছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানে নাবিকরা তীরে এলে সেখানেই তাদের বরণ করতে চান স্বজনরা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, রোববার সকালে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে দেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছে।
কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই করে গত ২৯ এপ্রিল জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে। গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) এটি বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় পৌঁছেছে।
জানা গেছে, এমভি আবদুল্লাহ সোমবার রাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করবে। মঙ্গলবার বিকেলে সদরঘাট জেটিতে নাবিকদের নিয়ে আসা হবে।
জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম জানিয়েছেন, জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো জেটিতে নোঙর করানো হবে না। সদরঘাটের জেটিতেই নাবিকরা নামতে পারেন। তবে কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। এর মধ্যেই আমরা চূড়ান্ত সময় ও স্থান জানিয়ে দেব। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের পছন্দ সদরঘাট জেটি।
যেভাবে জিম্মি ও মুক্ত হলেন ২৩ নাবিক
কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।
১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেন। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নিয়ে জাহাজ ছেড়ে যায়।
মুক্ত নাবিকদের ঘরে ফেরার যাত্রা
দস্যু মুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
গোল্ডেন হক থেকে এমভি আবদুল্লাহ
কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)