শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কক্সবাজারের উখিয়ার হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পাশের একটি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসার) আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। এ সময় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে এ অভিযান চালান আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএন সদস্যরা।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন উখিয়ার ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা আমির হোসেন (২৯), জিয়াউর রহমান (৩২), সৈয়দুল আমিন (৩১) ও মো. হারুন (২৪)।
এ সময় ৭টি দেশে তৈরি ওয়ান শুটারগান (এলজি), ২টি কিরিচ, ৪টি গ্রেনেড, ৬টি রাইফেলের গুলি, ২টি পিস্তলের গুলি, ১টি কার্তুজ, ১৩টি গুলির খোসা, গ্রেনেডে ব্যবহৃত দুই প্যাকেট লোহার বল ও ২টি ওয়াকিটকি চার্জার উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল। তিনি বলেন, আশ্রয়শিবিরে নাশকতার লক্ষ্যে আরসা সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে একটি পাহাড়ি আস্তানায় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা আশ্রয়শিবিরের কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়টির গয়ামবাগান (পেয়ারা) এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রসহ আরসার চার সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এপিবিএন জানায়,আজ রোববার আরসার চার সদস্যকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। আশ্রয়শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেখানে টহল তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, দীর্ঘ এক মাস চুপচাপ থাকার পর সম্প্রতি উখিয়ার হাকিমপাড়া, ময়নারঘোনা, লম্বাশিয়া, কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা। আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালান, আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে আরসার সংঘর্ষ, গোলাগুলি এবং ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ ও র্যাব জানায়, সর্বশেষ গত সোমবার ভোরে উখিয়ার মধুরছড়া (ক্যাম্প-৪ বর্ধিত) আশ্রয়শিবিরের হেড মাঝি মোহাম্মদ ইলিয়াসকে (৪৩) ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে আরসার সদস্যরা। ইলিয়াস ওই আশ্রয়শিবিরের সি-৩ ব্লকের বাসিন্দা আবুল কাশেমের ছেলে।
এর আগে ৬ মে আরসা সন্ত্রাসীরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) রোহিঙ্গা নেতা জাফর আহমদকে (৪২)।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, আরসার কাজে বাধা দিলে তাকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ২০২১ সালে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে আরসা। ২০২২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান চালাতে গিয়ে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
র্যাবের তথ্যমতে, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ঘটনায় ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে ১৪ মে পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে ১৬ জন খুন হন। অধিকাংশ নিহত হন আরসার গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অস্ত্র ব্যবসায়ী। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ, গ্রেনেড সংগ্রহ করে বাংলাদেশে নিয়ে এসে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)