রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ। তবে এবার টানা তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রাজশাহীতে আমের ফলন কম হয়েছে। যার প্রভার পড়েছে আমের দামে। ক্রেতারা বলছেন, এ বছর আমের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। তবে আমের মৌসুমে পুরো সপ্তাহজুড়ে আম কেনা-বেচা হয়। মৌসুমের শুরুর দিকে কোটি টাকার বেচাকেনা হলেও শেষভাগে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আম কেনা-বেচা হয় এ হাটে। এটাকে কেন্দ্র করে ৩ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। তবে, এ বছর আম কম থাকায় ভাটা পড়েছে কাজে।
সোমবার (৩ জুন) বানেশ্বর বাজারে আকার ভেদে গোপালভোগ আম বিক্রি হয় প্রতি মণ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে, রাণীপছন্দ আম তিন হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়, লক্ষণভোগ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়, ক্ষীরশাপাতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়, ল্যাংড়া আম দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে। এ ছাড়া গত মৌসুম যে আম ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। সেই আম এ মৌসুমে কিনতে হবে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে।
আম চাষি আবু হেনা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর গাছে আম কম। বাজারে আমের চাহিদা ভালো আছে। তাই এবার দামও অনেক বেশি। ঈদের পর আরও বাড়তে পারে আমের দাম।
এ বছর এখনো ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের ক্রেতা তেমন আসেনি। বানেশ্বর হাটের আড়ৎদারদের মাধ্যমে তারা আম কিনছেন। তারা ঈদের পরে হাটে নামতে পারে। বিগত বছরগুলোতে যে আম ১ হাজার টাকা মণ ছিল। সেই আম এ বছর ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমের দাম ভালো পাচ্ছেন জানিয়ে বিক্রেতা ইনছান আলী জানান, তার বাগানের ৩৫টা গাছের মধ্যে ১১টি গাছে ভালে আম ধরেছে। তবে তার ধারণা, ফলন কম হলেও দামের কারণে লোকসান গুনতে হবে না।
বানেশ্বর হাটের আমের আড়তদার শামীম আহম্মেদ বলেন, এ বছর আমের দাম অনেক বেশি। গত বছর যে আম বিক্রি হয় ১ হাজার টাকা মণ দরে। সেই আম এবার বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা মণ দরে। আমের ফলন কম হওয়ার তা দামের উপর প্রভাব ফেলেছে।
বানেশ্বর আম হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, বানেশ্বর হাট ইজারা হয়েছে ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বানেশ্বর বড় হাট হিসেবে জায়গার অভাব। তাই সড়কের উপরেই হাট বসে। তবে এতে যান চলাচলে সমস্যা হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৌসুমে আম কেনা-বেচা শুরু হলে সড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় এজন্য তদারকি করতে লোক রাখা হয়।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি
রাজশাহীতে আম কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে ৩ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বানেশ্বর হাটে। যারা অস্থায়ী ভিত্তিতে মাত্র দেড় থেকে দুই মাসের জন্য এ কাজ করেন। পুরো হাট জুড়ে ২০০টি আমের আড়ত রয়েছে।
ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, ২০০ আমের আড়তে ৩ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে। প্রতিটি আমের আড়তে ১৫ থেকে ২০ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। মূলত এ শ্রমিকরা আমকে কেন্দ্র করে সব ধরনের কাজ করে থাকে। এরমধ্যে আমের বোঁটা ভাঙা, ফ্যানের বাতাসে আটা শুকানো, পরিষ্কার করে খবরের কাগজে মোড়ানো, ক্যারেটে (আমের ঝুড়ি) সাজানো, সেই ক্যারেট ভর্তি অবস্থায় ট্রাকে উঠানোর কাজ করে থাকে তারা।
তিনি আরও বলেন, এ কাজের জন্য কোনো কোনো আড়তদার মাস চুক্তিতে শ্রমিক খাটায়। আর কেউ প্রতিদিন মজুরি ভিত্তিতে কাজ করান। আম ট্রাকে তোলা পর্যন্ত যাবতীয় কাজের জন্য ক্যারেট প্রতি শ্রমিকদের ১৫ থেকে ২০ টাকা দিতে হয়। আর হাটের ইজারা ক্যারেট প্রতি ১০ টাকা।
অনলাইনে আম বিক্রি
প্রতিবছর অনলাইনে আম কেনা-বেচা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর এখনো আমের হাট সেইভাবে জমেনি। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে আম কেনা-বেচা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অনলাইনে আম কেনা-বেচা করা আরিফুল ইসলাম। তিনি প্রতিবছর বানেশ্বর হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে আম কেনা-বেচা করে থাকেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)