শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দিনাজপুরের কাহারোলে কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের আবাদ করা প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ধান কেটে বিক্রি করেছে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার পুলিশ নিয়ে উপজেলার চক বাজিতপুর এলাকার জমি থেকে ধান কেটে নিলাম করেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম।
কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, লিজের জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন মৌখিক অনুমতি দিলে বোরো রোপণ করেন। সেচ, সার, নিরানি, কীটনাশক– এত দিন কিছুতেই তারা বাধা দেয়নি। শীত, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন-রাত কাজ করে ফসল ফলানোর পর প্রশাসন তা কাটার আগে একটিবারও বলেনি। কেন এমন করল বুঝতে পারছি না। পরে এসিল্যান্ড ও ইউএনওর কাছে গিয়েও বিচার পাইনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে এত দিন ২০০ থেকে ২৫০ মণ ধান পেয়েছি। প্রশাসন পেয়েছে মাত্র ১০৫ মণ। অর্ধেক ধান জমিতেই ফেলে নষ্ট করা হয়েছে। ধারদেনা করে আবাদ করেছি। ঘরে তোলার আগেই সব শেষ! মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খাব কী? দেনাই শোধ দেব কীভাবে?
জানতে চাইলে ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, মৌখিক অনুমতির কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের আদেশের পর সেখানে দুটি গ্রুপ দাঁড়িয়ে যায়। জমি প্রশাসনের দখলে থাকায় ধান কেটে নিলাম করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ধান রোপণ থেকে আবাদ পর্যন্ত একাধিকবার বাধা দিলেও শোনেননি আব্দুর রাজ্জাক।
কাহারোল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দীন জানান, জমির ধান কাটার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির সিদ্ধান্তে ধান কেটে উন্মুক্ত নিলাম করা হয়। পাঁচ বিঘা জমির ১০৫ মণ ধান জমির পাশেই নিলামে ৬৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে এখন ধানের মণ ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ নিলামে এগুলো বিক্রি করা হয়েছে ৬১০ টাকা মণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুল আলম বলেন, পাশের জমিতে ওইদিন ধান কাটছিলাম। প্রশাসনের লোকজন তিনটি হারভেস্টার এনে মুহূর্তে আব্দুর রাজ্জাকের ধান কেটে সেখানেই নিলামে বিক্রি করে। আমরা জেনে এসেছি, আব্দুর রাজ্জাকের বাবা প্রশাসনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছিলেন। এত দিন ওই পরিবারই আবাদ করছে। এখন প্রশাসন কেন ধান কাটল বুঝতে পারছি না।
জানা যায়, ১৯৬৩-৬৪ অর্থবছরে আব্দুর রাজ্জাকের বাবা বজলার রহমান ২ একর ৪২ শতক (পাঁচ বিঘা) জমি তৎকালীন দিনাজপুর জয়েন্ট কালেক্টর অব রেভিনিউ থেকে লিজ নেন। এর পর থেকে পরিবারটি নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখল করে আসছে। হঠাৎ ২০১২ সালে ওই জমিতে চাষাবাদে প্রশাসন বাধা দিলে আদালতে যান আব্দুর রাজ্জাক। এক পর্যায়ে গত বছর নভেম্বরে উচ্চ আদালত জমিতে এক বছরের স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।
আব্দুর রাজ্জাকের মা সবেজা বেগম বলেন, প্রায় ৬০ বছর আগে আমার স্বামী জমিটি লিজ নিয়ে নিয়মিত খাজনা শোধ করে চাষাবাদ করেছে। জমি নিয়ে সমস্যার কারণে আমরা আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছি। পরে উপজেলা প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশে ধান রোপণ করেছি। পাকা ধান কেটে নেওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)