শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। নীল আকাশের নিচে সমুদ্রের নির্মল বাতাস এরই মাঝে কখনো ‘ভাঙা ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, তারই মাঝে প্রেম শুধু গড়ে খেলাঘর।’
এসব মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজারও মানুষ ছুটে আসে, দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায়। এ নগরী এখন দেশের জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা প্রতিনিয়ত কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন এ সৈকতের পাড়ে।
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা সারাদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে অলস সময়গুলো যেন আর কাটতে চায় না। পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কুয়াকাটায় আগত অনেক পর্যটক। তবে পর্যটক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে খুব দ্রুতই কুয়াকাটায় একাধিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠবে।
দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী এলাকা সাগর কন্যা কুয়াকাটাকে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০১০ সালে পৌরসভায় উন্নীত হয়েছে কুয়াকাটা। প্রায় শতাধিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ হলেও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য কোনো ধরনের পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। সকালে সূর্যোদয়, দুপুরে সমুদ্রে গোসল, বিকেলে সৈকতে সূর্যাস্ত দেখার পর যখন সন্ধ্যা নামে তখন যেন আর কিছুই করার থাকে না পর্যটকদের। এ নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে নানা আক্ষেপ।
কুয়াকাটা সৈকতে গোসল করতে আসা সাব্বির রহমানের সঙ্গে কথা হয়, তিনি অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বলেন পরিবার নিয়ে সৈকতে গোসল করতে এসেছি কিন্তু আশপাশে কোনো চেঞ্জিং রুম নেই, না আছে লকারের ব্যবস্থা, বাচ্চাদের নিয়ে সৈকতের পানিতে নামার জন্য নেই কোনো টিউব, এমনকি সৈকতের পরিবেশ খুব নোংরা এবং জিও টিউব ও জিও ব্যাগে এলোমেলো অবস্থা। কুয়াকাটার প্রশংসা রয়েছে পুরো দেশজুড়ে। কিন্তু এভাবে কুয়াকাটা যদি প্রতিনিয়ত তার সৌন্দর্য হারাতে থাকে তাহলে একটা সময় কুয়াকাটা থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী কুয়াকাটাকে ঢেলে সাজানো উচিত বলে মনে করছি আমি।
খুলনা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক সিফাত উল্লাহ বলেন, সারা বাংলাদেশে যেভাবে কুয়াকাটার নাম-ডাক বা পরিচিতি, সে রকম তেমন পরিপাটি নয় কুয়াকাটা। সারাদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেও, সন্ধ্যা নামলে সৈকতে একমাত্র ফিশ ফ্রাই মার্কেট ব্যতীত তেমন কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে এখানে প্রতিনিয়ত সব বয়সের এবং সব শ্রেণির পর্যটক আসছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে পর্যটকদের ইন্টারটেইনমেন্টের জন্য শতভাগ কোনো ব্যবস্থা নেই কুয়াকাটায়।
এ বিষয় কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটাকে পর্যটন নগরী ঘোষণা করার পর থেকে পর্যায়ক্রমে উন্নত হচ্ছে এ নগরী। তবে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা অধিকাংশ পর্যটকই লম্বা ছুটি নিয়ে কুয়াকাটায় আসলেও তা কাজে লাগাতে পারছে না। কারণ কুয়াকাটায় যে সকল দর্শনীয় স্থানগুলো রয়েছে তা একদিনের মধ্যেই ঘুরে শেষ করে ফেলা যায়। তাই এরপর আর ওই পর্যটকদের কুয়াকাটা অবস্থান করার মানসিকতা থাকে না। তবে পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, ইকো রিসোর্ট, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সিনেমা হলসহ পর্যটকদের সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা থাকলে কুয়াকাটায় পর্যটক সংখ্যা বাড়তো।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা নিয়ে এ সরকারের একটি বড় মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী খুব দ্রুত কুয়াকাটায় কাজ শুরু হবে এবং সেই প্ল্যানে একটি পরিপূর্ণ পর্যটন নগরীতে যা যা থাকা দরকার সবই রয়েছে। কুয়াকাটা হবে বাংলাদেশের বুকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী।
এ বিষয় কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটাকে নিয়ে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন মাস্টারপ্ল্যানে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্রের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। কুয়াকাটাকে নিয়ে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের রাইড, ওয়াটার পার্ক, মিউজিয়াম সহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হবে। এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়ের শিল্পী এবং আঞ্চলিক লোকাল শিল্পীদের নিয়ে সমুদ্র সৈকত এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমি কথা বলে দেখব।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)