শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ছোটখাটো ভুলের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে যদি স্বৈরাচার সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে, তবে হত্যাকারি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপির) সভাপতি ড. কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় সদর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বন্যা দূর্গতদের উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের সেবার জন্য নয়, প্রতিশোধ নিতে ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগের নেতা যারা জেলে আছে, তারাও স্বীকার করেছে- শেখ হাসিনাকে বলতে শুনেছে, তার বাবাকে এদেশের লোকেরা যখন হত্যা করে, তখন সবাই মিষ্টি বিতরণ করেছে। তার বাবার গোসল ও জানাজাও ঠিকমত হয়নি। ক্ষমায় এসে জনগণের কাছ থেকে সেটার প্রতিশোধ নিতে।
তবে মনে রাখবেন, এটা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব। কোরআন-হাদিস থেকে যখন সরে যাবে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকেও গজব নাযিল হয়ে যায়। সেই গজবই আওয়ামী লীগের ওপর পড়েছে। এই দলের নাম নিশানাও বাংলাদেশে থাকবে না।
এদেশে মুসলমানদের আর মূর্তিপূজা করতে হবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের (বঙ্গবন্ধুর) যে কয়টা মূর্তি আছে সব ভেঙে ফেলেন। এটা ইসলামে হারাম। তবে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে আছে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব।
প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক থাকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি দফতরে এখনো স্বৈরাচারী হাসিনার লোটারা বহাল রয়েছে। যে কোন সময় তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে। কারণ তারা এদেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে না। তাদের দরকার পয়সা। টাকা হলো তাদের আল্লাহ। আল্লাহকে যদি বিশ্বাস করতো মানুষকে কখনো গুলি করতে পারতো না। আমরা গুলি করেছি, তবে বাঙালিদের নয়, পাকিস্তানীদের। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজের দেশের ছেলে মেয়ে, আত্মীয়া স্বজনকে গুলি করেছে। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুলিশ বলতে শুনেছি, একটা গুলি করলে একটা মরে, সঙ্গের গুলো সরে না। তারা জানে না এটা বাঙালির চরিত্র, তারা জীবন দিতে শিখেছে।
কর্ণে অলি বলেন, অন্তবর্তী সরকার দেশ সংস্কার করে একটি নির্বাচনের পরিবেশে যাবে। যে নির্বাচনের কথা মানুষ ভুলে গেছে। তাই ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই ভোটের মাধ্যমে দেশে যোগ্য নেতৃত্ব গড়বে। সেই নেতৃত্বে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে স্বাধীন হয়েছে, তার অনুভাব নয় সুফল জনগনকে পেতে হবে। যখন মানুষ নিশ্চিন্তে ঘরে ঘুমতে পারবে, মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারবে। এখন নিশ্বাস নিলেও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন না জনগন। কারণ বিভিন্ন দপ্তরে ফ্যাসিবাদী হাসিনার লোটারা এখনো আছে। এদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২৪ এর অন্দোলনে হাজার হাজার লোক হত্যা এবং প্রায় ৩০ হাজার ছাত্র জনতাকে আহত করেছে শেখ হাসিনা ও তার লোটারা। হত্যাকারিদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। এমপি-মন্ত্রী পর্যায়ের চোরদের, এমনকি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের যারা এদলের দোহাই দিয়ে সম্পদ গড়েছেন, দুদকের মাধ্যমে তাদের বিচার করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আয়কর রিটার্ন দিতে হবে। তারা কিভাবে কয়েক বছরপর কোটি টাকার মালিক হয়।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যতদিন ন্যায়ের পথে থাকবেন, ততদিন আল্লাহ আপনাদের পাশে থাকবে। এদেশের দায়িত্ব এখন নতুন প্রজন্মকেই নিতে হবে। আমাদের দায়িত্ব শেষ, আপনাদের দায়িত্ব শুরু। তাই দেশ ওদেশের জনগণের যানমাল রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এলডিপির সভাপতি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর সদর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, জেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন ভূঁইয়াসহ অনেকে।
এদিকে বন্যা দূর্গতদের মাঝে উপহার বিতরণ শেষে দুপুরে শহরের একটি পার্টি সেন্টারে ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শহীদদের স্বজনদের সাথে মতবিনিময় করেন এলডিপির সভাপতি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)