শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জে ৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দেওয়া হয়নি। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের।
গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শামীম ওসমান ও তার বাহিনী গুলি চালায়। এসব অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে জেলায় ৭৩৭টি অস্ত্র লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত টানা চার মেয়াদে মোট ৩২১টি অস্ত্র লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর জেলা প্রশাসন বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া ১৯১টি অস্ত্রের লাইসেন্স ইতোমধ্যে স্থগিত করেছে। এর মধ্যে ১০২টি শটগান ও বন্দুক, ৬৭টি পিস্তল, ১৪টি রাইফেল ও ৮টি রিভলভার। তবে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৩৬টি অস্ত্র জমা হলেও এখনো ৫৫টি অস্ত্র জমা পড়েনি।
এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে যা তারা জমা দেননি। তাই জেলা প্রশাসন এসব অস্ত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে৷
অস্ত্র জমা না দেওয়ার তালিকায় নাম আছে শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু। এছাড়া এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীরও অস্ত্র জমা না দেওয়ার তালিকায় নাম আছে।
এছাড়া অস্ত্র জমা দেননি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার স্ত্রী তারাব পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র হাছিনা গাজী, বড় ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা ও ছোট ছেলে গাজী গোলাম আসরিয়াও। ২০১৭ সালে তাদের নামে চারটি শটগানের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এছাড়াও তাদের নামে পিস্তলের লাইসেন্সও ছিল যা তারা জমা দেননি।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও যুবলীগের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম খানও অস্ত্র জমা দেননি। এর আগে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান নিজাম ও নিয়াজুল। ওই ঘটনায় করা মামলা থেকে তাদের দুইজনকে পুলিশ অব্যাহতি দিলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিয়াজুলের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।
অভিযোগ আছে, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও তার বাহিনীর কাছেও একাধিক অবৈধ অস্ত্র আছে। প্রায়ই তারা অস্ত্র হাতে শহরে মহড়া দিতেেন। যদিও আজমেরী ওসমানের কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। গত বছর তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে একটি শটগান ও পিস্তলের লাইসেন্সের আবেদন করলেও তার অনুমোদন পাননি।
এছাড়া রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও মুন্সিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জয়নাল আবেদীন অস্ত্র জমা দেননি।
নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি, তাদের ওই অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)