শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জয়পুরহাটে সরকারি খাস পুকুর দখল নিয়ে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে আহতদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার পর ৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে আসামি আটকের তথ্য জানানো হয়। এর আগে এদিন সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার পশ্চিম পেঁচুলিয়া কোচপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম, উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার রাজিব কুমার বিশ্বাস, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহেদ আল মামুন, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ-প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মারধরে একপক্ষের আহতরা হলেন, কোচপাড়া গ্রামের রাজেন চন্দ্র বর্মণ, পবিত্রা রানী, ভারতী রানী, অর্চনা রানী, মিঠুন চন্দ্র বর্মণ, বিজলী রানী, পাতুকা রানী, মুক্তা রানী, স্বপ্না রানী, চন্দনা রানী, বিধান চন্দ্র ও শুভ চন্দ্র বর্মণ। এদের মধ্যে গুরুতর জখম হয়েছেন রাজেন চন্দ্র বর্মণ, পবিত্রা রানী, ভারতী রানী, অর্চনা রানী, মিঠুন চন্দ্র বর্মণ, বিজলী রানী। তারা জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর অন্যরা আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় অপরপক্ষের এক থেকে দুইজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ-প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কোচপাড়া এলাকায় একটি সরকারি পুকুর রয়েছে। কোচপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বিগত কয়েকবছর ধরে একটি সমিতির নামে ওই পুকুরটি ইজারা নিয়েছিল। ১৪৩০ সন পর্যন্ত তাদের ইজারা ছিল। ওই পুকুরটি আগে পার্শ্ববর্তী জিতারপুর গ্রামের মওলা, কাসেমরা চাষ করতেন। এই পুকুর নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান থাকায় ১৪৩১ সন থেকে কেউ ইজারা পায়নি। তবে পুকুরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ির পাশে হওয়ায় তারা ব্যবহার করতেন। শুক্রবার সকালে মওলা, কাসেম তাদের লোকজন নিয়ে ওই পুকুরে মাছ ছাড়তে যান। এসময় রাজেন মাছ ছাড়তে নিষেধ করলে তাকে মারপিট করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে সবাইকেই এলোপাতারি মারধর করে আহত করা হয়। পরে সেখানে থাকা দুটি খড়ের পালায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বিএনপির দুই পক্ষ একই সময়ে একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় জয়পুরহাট সদর উপজেলায় শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এই সময়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাঁচ জন বা তার অধিক ব্যক্তি চলাফেরা করতে পারবে না নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে এমন নিষেধাজ্ঞার পরেও কোচপাড়া এলাকায় দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলায় আইন প্রয়োগ করেনি প্রশাসন।
আহত অর্চনা রানী বলেন, ওই পুকুরের পাশে আমাদের গ্রামের মন্দির রয়েছে। মন্দিরের প্রতিমা সেখানে ডোবানো হয়। আর গ্রামের সবাই ওই পুকুর ব্যবহার করি। এজন্য গ্রামের পক্ষ থেকে ইজারা নেওয়া ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সকালে এসে আমাদের ওপর হামলা করে এলাপাতারি মারধর করে আহত করা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার বাদী সুবাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমাদের গ্রামের খাস পুকুরটি বাংলা ১৪৩০ সন পর্যন্ত পশ্চিম পেঁচুলিয়া কোচপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নেওয়া ছিল। ১৪৩১ ও ১৪৩২ সনের জন্য পুনরায় ইজারা নিতে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি পাওয়া যায়নি। যেহেতু আমরা আগে থেকেই মাছ চাষ করতাম এজন্য পুকুরটি ব্যবহার করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে আজকে সকালে জোরপূর্বক মাছ ছেড়ে দিতে গিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। আমাদের গ্রামের লোকজনদের যেভাবে মারধর করা হয়েছে তা বলার মতো না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার রাজিব কুমার বিশ্বাস বলেন, ওই পুকুরটি এখন কোনো পক্ষের কাছে নেই। সেটি নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলছে। এ কারণে ইজারা দেওয়া হয়নি। মারধরের স্বীকার ব্যক্তিরা থানায় মামলা করবেন। তাছাড়া তাদের দুটি খড়ের পালায় আগুন ধরে দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটির ক্ষতিপূরণ দিতে চাওয়া হয়েছে। আর ১৪৪ ধারার পরেও এমন ঘটনার পর হামলাকারীদের সেখানে পাওয়া যায়নি, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
এসপি মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, মূলত পুকুর নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে চারজন এজাহারনামীয় আর দুইজন অজ্ঞাত। তারা হলেন, গোলাম রব্বানী, গোলাম মওলা, মোতাহার হোসেন, জামিউল লাদাইন, ছানোয়ার হোসেন ও লিয়াকত আলী।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)