বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি সংস্কার চায়। তবে যে সংস্কার জনগণের কল্যাণের জন্য হবে সেই সংস্কার চায়। এ জন্য ২০২৩ সালে একটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও পলায়নের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে কথা বলে সংস্কারের ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। আমাদের এই ৩১ দফা বিবেচনায় নেওয়া হলে প্রকৃত জনকল্যাণে সংস্কারের হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যশোর জেলা বিএনপি এ স্মরণসভায় আয়োজন করে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিশন নামের সংস্কারের কথা বলেছেন। আমরা ২০২৩ সালে দলের পক্ষ থেকে এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল দল একত্রিতভাবে সংস্কারের পক্ষে ৩১ দফা দিয়েছি। আজকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি সংবিধানের মধ্যে কতগুলো লাইনের পরিবর্তন। কোথায় কী পরিবর্তন করতে হবে এটাই কি মুখ্য বিষয়। সংবিধানে অবশ্যই কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। দেশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন যে বিষয় আছে, সময়ের এবং দিন দুনিয়ার পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে অবশ্যই কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি যে পরিবর্তনের ফলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে সেই কাজগুলো করলে আমি মনে করি প্রকৃত সংস্কার হবে। শুধু বইয়ের কতগুলো লাইন পরিবর্তন করাকে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সংস্কার মনে করি না। আমরা মনে করি, যে সংস্কার করলে বেকারদের কর্মসংস্থান, নারীর স্বাধীনতা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুশিক্ষা নিশ্চিত হবে, মানুষের সার্বিক স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত হবে সেটাই প্রকৃত সংস্কার।
সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যে কয়েকজন রাজনীতিবিদের সততা, কর্মযজ্ঞতা, জনকল্যাণে ব্যাপক অবদান ও ব্যক্তিত্বের জন্য প্রশ্নহীনভাবে গর্ববোধ করতে পারেন তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম অন্যতম। বিএনপি যে কারণে তাকে অন্যমাত্রায় স্মরণ করে। বিশেষ করে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের আন্দোলনের সময় প্রতিটি রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সামনে সুন্দরভাবে তরিকুল ইসলামের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ফুটে ওঠে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শান্তিময় যশোর জেলার সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন তরিকুল ইসলাম। তার শূন্যতা দেশের প্রতিটি মানুষের মত আমিও গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে অনুভব করছি।
তারেক রহমান বলেন, মরহুম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব সীমিত ছিল। কিন্তু একটি বিষয়ে আমি তাকে স্মরণীয় মনে করি সেটি হচ্ছে ১/১১ শাসনামলে তিনি এবং আমি মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। আমি তখন প্রথম গ্রেপ্তার ও পরিস্থিতির কারণে বেশ বিচলিত ছিলাম। পিজি হাসপাতালে আমার সাথে তাঁর এক মিনিটের মতো দেখা হয়। আমাদের মধ্যে যাতে কথা না হয় তার জন্য পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক তৎপর ছিল। এর মাঝেই তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তারেক ভয় পেও না, সাহস রাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ তার এই একটি কথা আমাদের সাহসী করে তুলেছিল। তিনি কত বড় মাপের নেতা ছিলেন তার আরও প্রমাণ আমি আমার পরিবার এবং সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক ও আদর্শে অবিচল এক নেতা। তাকে এরশাদের স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিস্ট শাসনামলে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে দল পরিবর্তনের রাজি করাতে পারেনি। এ কারণে দল তার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা রাখে। তরিকুল ইসলামকে এ কথায় আমরা একজন যোদ্ধা হিসেবে চিনি। উনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদনি মানুষের পক্ষে লড়াই করেছেন। মানুষের কথা বলা থেকে শুরু করে, রাজনীতি, মর্যাদা, দেশের স্বাধীনতা সর্বপরি দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে তিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরিকুল ইসলামের জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেল হক সাবু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, চিকিৎসক সমাজের পক্ষে অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তন্ময় সাহা, জেলা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশাররফ হোসেনের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে স্মরণসভা শুরু হয়। এ সময় তরিকুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। জেলা ইমাম পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান মোনাজাত পরিচালনা করেন। স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)