বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
১১ বছর আগে বালি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনকে অপহরণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে এনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর প্রধান আসামি করে মোট ৯ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীসহ আজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) নিহত বিল্লাল হোসেনের বোন শালপোনা পারভীন (৪৪) বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত বিল্লাল হোসেন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানাধীন দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিপন আলী বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সিআইডিকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর ও দর্শনা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন নফর (৪৭), তৎকালীন দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মুনছুর বাবু, দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আলীহীম (৫৫), দামুড়হুদা মডেল থানার থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মো. আহসান হাবিব, উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দেবাশীষ এবং কনস্টেবল সাজিদুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিল্লাল হোসেন বালির ব্যবসা করতেন। গত ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন নফর, আলী মুনছুর বাবু ও আলীহিম নিজেরা এবং দলীয় লোক মাধ্যমে বিল্লাল হোসেনের নিকট চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। বিষয়টি তৎকালীন দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান মিজানকে জানানো হলেও তিনি আইনি সহায়তা না করে উক্ত আসামিদের অবহিত করেন।
২০১৩ সালের ১১ আগস্ট গভীর রাতে সাবেক এমপি ও তৎকালীন এসপির নির্দেশে সব আসামিরা বিল্লাল হোসেনের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেই রাতেই দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর উজলপুর রাস্তার হরচরার মাঠে আসামিরা বিল্লালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে এবং এসআই মিজানুর রহমান মিজান একাধিক গুলি করে বিল্লাল হোসেনকে হত্যা করে। পরে ‘পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিল্লাল হোসেন নিহত হয়েছে’ বলে নাটক সাজায়। সকালে সাক্ষীগণসহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিল্লাল হোসেনের বাম বুকে, বাম বগলের নিচে, ডান উরুসহ একাধিক স্থানে গুলি করা দেখতে পায়। পিঠে, দুই হাঁটুর নিচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা দেখা যায় এবং বিল্লালের দুই হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে বাঁধা ছিল। তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ উপড়ানো হয়। পরের দিন এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় আদালতের আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা জেনে আসামিরা আমার (নিহত বিল্লালের বোন শালপোনা পারভিন) পরিবারকে অপহরণ, গুম খুনের হুমকি দেওয়ায় সেই সময় কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দীর্ঘ ১১ বছর আগের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে এই মামলা দায়ের করলেন নিহত বিল্লাল হোসেনের বোন শালপোনা পারভিন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)