সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ফাইল ছবি
বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্যে একটি টেন্ডার আহ্বান করেছে পাকিস্তানের ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিপি)। সোমবার এই দরপত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দশকের পর দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল কেনার এই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ২৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টা নির্ধারণ করেছে টিসিপি। ২০ নভেম্বর প্রকাশিত টিসিপির ওই দরপত্রের নথি ডন দেখেছে বলে জানিয়েছে।
দরপত্রের প্রস্তাবকারী কোম্পানি, পার্টনারশিপ ও একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘‘আলাদা সিল করা দরপত্র’’ আহ্বান করেছে টিসিপি। ১ লাখ টন লম্বা দানার সাদা চাল (আইআরআরআই-৬) কিনবে প্রতিষ্ঠানটি। পরে তা প্যাকেটজাত করে করাচি বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে।
দরপত্র জমা দেওয়ার পর ২১ কার্যদিবস পর্যন্ত মূল্যপ্রস্তাব বৈধ থাকতে হবে। চুক্তি হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে চাল জাহাজীকরণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
দরপত্রে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টন কিংবা তার সমপরিমাণ চালের প্রস্তাব জমা দিতে হবে। সর্বোচ্চ পরিমাণ ১ লাখ টনও প্রস্তাব করা যাবে।
দরপত্র অনুযায়ী, চাল অবশ্যই পাকিস্তানে উৎপাদিত সর্বশেষ মৌসুমের ফসল এবং মানুষের ভক্ষণ উপযোগী হতে হবে। এতে কোনো দুর্গন্ধ, ছত্রাক, বিষাক্ত আগাছার বীজ, পোকামাকড় কিংবা সংক্রমণের চিহ্ন থাকা চলবে না।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি চালকে বাংলাদেশের আমদানি সরবরাহ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন এই দরপত্রকে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সম্প্রতি যে চাল কিনেছে, তার কিছু অংশে ভারতের উৎপাদিত চাল ব্যবহৃত হতে পারে।
সোমবার আরও একটি চাল আমদানির দরপত্র ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে স্থানীয় বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধারাবাহিকভাবে চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করছে ঢাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারি পর্যায়ে সরাসরি বাণিজ্য শুরু করে। ওই সময় ৫০ হাজার টন চাল আমদানির মাধ্যমে এই বাণিজ্যের শুরু হয়।
গত মাসে অনুষ্ঠিত নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) সভায় বাংলাদেশকে চীন ও মধ্য-এশীয় দেশসহ আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে করাচি পোর্ট ট্রাস্টকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেয় পাকিস্তান।
• চাল রপ্তানি
২০২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পাকিস্তানের চাল রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমে গেছে; যা নীতিগত ও আইনি বাধা নিয়ে খাতটির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পাকিস্তান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা এই কমতির কারণ হিসেবে ভারতের ২০২৪ সালে চাল রপ্তানি পুনরায় চালু, বাসমতিতে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) প্রত্যাহার এবং চাল রপ্তানিতে শূন্য হারের নীতি চালুর কথা জানিয়েছেন।
তবে সরাসরি মূল্যযুদ্ধে না গিয়ে পাকিস্তানি রপ্তানিকারকরা বাজার ধরে রাখায়, বিশ্ববাজারে ভারতের পুনরায় প্রবেশ গত বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানের চাল বাণিজ্যে তেমন কোনো বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি।
এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যসহ বাসমতি চালের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় পাকিস্তানের জন্য মার্কিন বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভলজা গ্লোবাল ট্রেড প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট বাসমতি রপ্তানির ২৪ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)