মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ফাইল ছবি
একটি ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের ৪৭টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের জটিল প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেল যন্ত্রাংশ ও ওষুধ শিল্পের বিকাশে বড় বাধা তৈরি করছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে লাইসেন্সিং সহজীকরণ জরুরি। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নে যুগোপযোগী নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আয়োজিত “স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনারে এসব বক্তব্য উপস্থাপিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
তিনি বলেন, এপিআই (অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস) বা কাঁচামাল শিল্পে পিছিয়ে থাকাটা বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন প্রক্রিয়ার জটিলতা শিল্পের বিকাশে বাধার সৃষ্টি করছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুগোপযোগী নীতিমালা ছাড়া মেডিকেল ইক্যুপমেন্টস শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা ও ইকো-সিস্টেম উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, একটি এপিআই শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোক্তাকে ৪৭টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়— যা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে। তিনি লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি জানান।
ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আকরামুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্সিং সহজ না হলে বেসরকারি খাত স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেল ইকুইপমেন্টস ও ওষুধ শিল্পে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে না।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আসরাফ হোসেন বলেন, লাইসেন্সের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কিছু সময় লাগলেও ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা হয় না। দায়িত্ব দ্রুততার সঙ্গে পালন করছে অধিদপ্তর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ঔষধ শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। অন্তত তিন বছর মেয়াদি লাইসেন্স প্রদানের দিকেও কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি রয়েছে সরকারের। এলডিসি-উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় কাঁচামাল শিল্প স্থাপন, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস এবং গবেষণা-উন্নয়নে জোর দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের একার পক্ষে সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার, বেসরকারি খাত ও একাডেমিয়ার সমন্বয় জরুরি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক গাজী এ কে এম ফজলুল হক জানান, মেডিকেল ইক্যুপমেন্টস শিল্পের জন্য একটি স্বতন্ত্র খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে বিডা। যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরামর্শের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হতে পারে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান বলেন, সব নাগরিকের আয়সীমা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মানসম্মত চিকিৎসা যেন রোগীর সাধ্যের মধ্যে থাকে— সেদিকে লক্ষ্য রেখে নীতিনির্ধারকদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। মানোন্নয়নে বাজেট বৃদ্ধি ও দক্ষ জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।
সেমিনারে এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালকরা, ব্যবসায়ী নেতারা এবং সাধারণ পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)