শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নিত্যপণ্যের বাজারে আরেক দফা বেড়েছে মুরগির দাম। বিশেষ করে সোনালি মুরগির দর ৪০০ টাকা ছাড়িয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে সবজি। শতক ছুঁয়েছে কয়েকটি সবজির দর। ডিম, আলু ও চালের মতো কয়েকটি নিত্যপণ্যের বাজারেও রয়েছে চড়াভাব। এভাবে একের পর এক নিত্যপণ্যের দর বাড়তে থাকায় চাপে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বোঝার সমন্বয় করতে তারা কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কলোনি বাজারে কথা হয় মো. হাবিব নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। পেশায় রংমিস্ত্রি এই ক্রেতা বলেন, ‘কয় দিন ধরে সবজির দামও বাড়তি। বাজারে এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আমগো কপালে মাছ-মাংস আর জুটবে না।’
মুরগি ও সবজির দর বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের দাবি, এপ্রিলের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ব্যাহত হয়েছে সবজি উৎপাদন।
রমজানে বেড়ে যাওয়া মুরগির বাজার ঈদের পর আরেক দফা বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও তেজগাঁও কলোনি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ থেকে ৪১০ টাকায়। অথচ রোজার মধ্যেও কেনা গেছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। দাম বেড়েছে ব্রয়লারেরও। এটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহে সোনালির কেজি ২০ থেকে ৩০ এবং ব্রয়লারের কেজিতে ১০ টাকার মতো দর বেড়েছে। দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা।
মুরগির প্রভাব পড়েছে ডিমের বাজারে। গত ১৫ দিনে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ২০ টাকার মতো। খুচরা পর্যায়ে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং সাদা রঙের ডিমের ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর মাংসের কেজি কিনতে খরচ পড়ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। খাসির মাংসের দাম হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রচণ্ড গরমে প্রান্তিক খামারিদের অনেক মুরগি মারা গেছে। এখন তাপমাত্রা কমার সঙ্গে মুরগি ও ডিম উৎপাদনে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
এদিকে, এক সপ্তাহে কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে শতক ছুঁয়েছে বেগুনের কেজি। কাছাকাছি ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বরবটি ও কাঁকরোল। অস্বাভাবিক দর বেড়েছে পেঁপের। প্রতি কেজিতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া ঝিঙা, ধুন্দুল ও চিচিঙার কেজিও ৭০ থেকে ৮০ টাকা। পটোল ও ঢ্যাঁড়শ কেনা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। ঝাঁজ বেড়েছে কাঁচামরিচেরও। গত সপ্তাহেও ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল। গতকাল কেজি ছাড়িয়েছে দেড়শ টাকা। এখনও স্থিরতা আসেনি আলুর বাজারে। খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, গরমের কারণে মাঠে সবজির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া অনেক আগে থেকেই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে নদী কিংবা হাওরের মাছ। এখন ধীরে ধীরে বিলাসী মাছের কাতারে চলে যাচ্ছে চাষের মাছও। আকার ভেদে চাষের তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। রুই মাছের দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ইলিশ খাওয়া আরও দুরূহ। বিক্রেতারা এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম হাঁকছেন দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কোরবানি ঈদের প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও চড়া মসলার বাজারও।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)