রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা, বলিষ্ঠ চালচলন। প্রথম দর্শনে মনে হবে একজন নিরীহ, ধর্মভীরু বুজুর্গ। বোঝার উপায় নেই যে এই চেহারার আড়ালে রয়েছেন একজন প্রবল পরাক্রমশালী ব্যবসায়ী। যার হাতের ইশারায় চলেছে দেশের ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজার।
সন্দেহাতীতভাবেই তিনি সালমান এফ রহমান। যাকে ‘দরবেশ’ নামেও চেনেন সবাই। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) নৌপথে পালাতে গিয়ে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
একনজরে সালমান এফ রহমান
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকোর যাত্রা শুরু করে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেক্সিমকো উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করে। আশির দশকে ওষুধ শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ হওয়ার পর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে বিনিয়োগ করে।
এরপর আসে টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ। ৯০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি সালমান এফ রহমান ঢুকে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথমে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন’ নামে একটি দল গঠন করেন। পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় প্রথমদিকে তার ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষত ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বেক্সিমকো বেশ খারাপ সময় পার করে। আর ২০০৭-২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে প্রায় দুই বছর জেলে থাকতে হয়েছে। এর পরপরই তিনি এসব সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় বসার পর তড়তড় করে কেবল এগিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের অধিকারী হন। এর ফলে ২০০১ থেকে দীর্ঘদিন যে আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে চলছিলেন তা থেকে সম্পূর্ণ বের হয়ে আসেন ২০০৯ সালে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় গত ১৬ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত এবং শেয়ারবাজার তছনছ করে দিয়েছে সালমান এফ রহমান ও তার বেক্সিমকো গ্রুপ। নিজের স্বার্থে ঋণ খেলাপির আইন পরিবর্তন করে তার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।
২০১৩ সালে সালমান এফ রহমানের নির্দেশে ব্যাংকিং খাতের ঋণ পুনর্গঠন ফরমুলা তৈরি করা হয়। এ সুযোগে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা করেন নানা অপকর্ম। কমে যায় ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়ার প্রবণতা। এরপরই লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা বলে ব্যাংকাররা অভিযোগ করেছেন। ফলে বাংলাদেশের আর্থিক খাত এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি
শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির এক অবিচ্ছেদ্য নাম সালমান এফ রহমান। সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের জন্য তো বটেই, ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় আওয়ামী লীগ সরকার আগের দফায় (১৯৯৬ সালে) ক্ষমতায় আসার চার মাসের মধ্যেই যে বড় শেয়ার কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়, তার সঙ্গেও ছিল তার সরাসরি সম্পৃক্ততা। তখনও কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ।
ওই ঘটনায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান ও ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু এ ঘটনার অন্যতম অংশীদার বেক্সিমকো ও শাইনপুকুরের বিরুদ্ধে মামলায় কোনো অভিযোগ গঠন করাই সম্ভব হয়নি। মামলা করার পরের দিনই প্রতিষ্ঠান দুটির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। উচ্চ আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা যাবে না বলে জানানো হয়।
ফের শেয়ার কেলেঙ্কারি
২০০১ সালে বিএনপি সরকার আসার আগ পর্যন্ত বেসরকারি খাতে দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় গ্রুপ ছিল বেক্সিমকো। কিন্তু এসময় থেকেই মূলত বেশ আর্থিক কষ্টে পড়ে যান তিনি। বিএনপি শাসনামলসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন হয় যে তিনি কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছিলেন না। বেক্সিমকো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকার জোগান দিয়ে কোম্পানিকে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখেন।
এরপর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই রাতারাতি তার সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে বেক্সিমকো বিভিন্ন কোম্পানির নামে নেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পরিশোধ করতে শুরু করে। এসময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সাত বছর ধরে জমতে থাকা ঋণের বোঝার অনেকটাই মিটিয়ে দেয়। পাশাপাশি ২০০৯-এর মাঝামাঝি থেকে তারা দেশে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিতে শুরু করে। এভাবেই ঋণের ভারে জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠান রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে। জিএমজি এয়ারলাইন্স, ওয়েস্টিন হোটেল, বিডিনিউজ২৪-এর মালিকানা, সিঙ্গারের মতো একটি বিশাল কোম্পানি, ইউনাইটেড হাসপাতাল, একটা বিখ্যাত স্কুল ইত্যাদি কিনে ফেলে।
এরপর ২০১০ সালে আবার দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ কেলেঙ্কারি হয়। যেখানে খলনায়কের ভূমিকা পালন করেন সালমান এফ রহমান। লুটে নেন হাজার হাজার কোটি টাকা। পুঁজিবাজারের সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত ব্যক্তি সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে বাজারের উত্থান-পতন এবং বিভিন্ন ধরনের কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে রেহাই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন তদন্তে পুঁজিবাজারে ফিক্সড প্রাইস, বুক-বিল্ডিং, রাইট শেয়ার, ডিরেক্ট লিস্টিং, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, প্রেফারেন্স শেয়ারসহ সব অনিয়মের ক্ষেত্রেই সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। অথচ এসব অনিয়মের সঙ্গে সালমান এফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের নাম জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তিনিসহ অন্যদের অপরাধ বিএসইসির কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির এই নায়ক ২০১০ সালে একই ভূমিকায় জালিয়াতি করে শেয়ারবাজারের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি।
শীর্ষ ঋণ খেলাপি
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি। যা দেশে ব্যাংক খাতে সুদের হার চড়া পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া এই কারণে হাজার হাজার উদ্যোক্তার ঋণপ্রাপ্তি ও বিনিয়োগে বাধা তৈরি হয়েছে। তাই বলা হয়ে থাকে, দেশের ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির অন্যতম বড় বাধা হলো এই খেলাপি ঋণ। আর দেশের খেলাপি ঋণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বেক্সিমকো অনেক পুরোনো ও শীর্ষ স্থানীয়দের অন্যতম। গত দুই দশকে সর্বোচ্চ ঋণ খেলাপিদের মধ্যে অন্যতম বেক্সিমকোর খেলাপি ঋণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সে কারণে সালমান এফ রহমান দেশের একজন শীর্ষ ঋণ খেলাপি হিসেবেও পরিচিত।
২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে সংসদে শীর্ষ ১০ ঋণ খেলাপির তালিকা দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ওই তালিকায় ঋণ খেলাপির শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। এ ছাড়াও শীর্ষ দশের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান ছিল।
এদিকে, বর্তমানে সালমান এফ রহমান ও বেক্সিমকো গ্রুপের একটি বড় অঙ্কের বকেয়া রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে। দীর্ঘদিন ধরে ঋণের টাকা দিয়ে পুরোনো ঋণ নবায়নের অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনার এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপের এতটাই প্রভাব যে তাদের কারণে ব্যাংকের যেকোনো সূচকে পরিবর্তন দেখা যায়। তার মধ্যে অন্যতম একটি সূচক খেলাপি ঋণ।
জনতা ব্যাংকের নিজস্ব নথিপত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। ফলে জুন মাসের শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। মার্চ শেষে যা ছিল ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে ১৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকায় নেমে আসে। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ নামে। অভিযোগ রয়েছে, খেলাপি ঋণের বড় অংশই অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। এসময়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে ১৩ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। তবে আরও কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান তালিকায় যোগ হওয়ায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে হয় ১১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ছিল ২৩ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ও এস আলম গ্রুপের ঋণ ছিল ৯ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এসব গ্রুপের বেনামি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি বলে গুঞ্জন রয়েছে ব্যাংক পাড়ায়।
কত টাকার মালিক সালমান এফ রহমান?
২০১৭ সালে চীনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হুরুন গ্লোবালের বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথমবারের মতো উঠে আসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের নাম। তখন তিনি ১৩০ কোটি ডলারের মালিক ছিলেন। প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরলে তখনকার হিসাবে এ সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, ঢাকা-১ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩১২ কোটি টাকার বেশি। পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৬ কোটি টাকার মতো।
হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, সালমান এফ রহমান পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। হলফনামা অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ১৪টি মামলা হয়েছিল, তবে তিনি সবকটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। সালমান এফ রহমান ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হন। ওই বছর নিজের হলফনামায় অস্থাবর (টাকা, শেয়ার, সোনা ইত্যাদি) সম্পদ উল্লেখ করেছিলেন ২৭৬ কোটি টাকার কিছু বেশি। এবার যে ৩১২ কোটি টাকা দেখিয়েছেন, তার মধ্যে প্রায় ২৯৩ কোটি টাকা শেয়ার ও সমজাতীয় সম্পদ। ব্যাংকে জমা আছে ৯ কোটি টাকার মতো। সালমান এফ রহমানের স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেখানো হয়েছে আসবাব ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মূল্য বাবদ। তার ব্যাংকে আছে প্রায় ১ কোটি টাকা। সালমান এফ রহমানের বার্ষিক আয় ২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকার কিছু বেশি, যা ২০১৮ সালে ছিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। পাঁচ বছরে তার আয় বেড়ে ২ দশমিক ৭ গুণ হয়েছে। সালমান এফ রহমানের আয়ের বড় অংশ আসে শেয়ার ও সমজাতীয় বিনিয়োগ থেকে, পরিমাণ প্রায় ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। স্থাপনার ভাড়া, চাকরি ও ব্যাংক সুদ খাতেও আয় আছে তার।
জমির ভুয়া দলিল
২০০০ সালের দিকে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড জমির বেশ কিছু ভুয়া দলিল নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়েছিল বড় অঙ্কের ঋণের জন্য। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরবর্তীতে জমির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন– জমিগুলো আসলে ক্রয়ই হয়নি। জমির মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে গাজীপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হলেও তিনি তাদের সাহায্য করেননি।
এরপর তারা তৎকালীন ইউএনওর কাছে গেলে তিনি তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ব্যক্তিগতভাবে ইউএনও খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হন, প্রকৃত মালিকরা বেক্সিমকোর কাছে জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি। বরং রেজিস্ট্রি অফিসে ভুয়া মালিক সাজিয়ে এসব দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এরপর ইউএনও লিখিতভাবে বেক্সিমকো প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে নোটিশ পাঠান। এসময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ওই ইউএনওকে নানা লোভ এবং ভয়ভীতি দেখিয়েও ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ইউএনও নিজে বাদী হয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এই জমি জালিয়াতির সঙ্গে সালমান এফ রহমান সরাসরি জড়িত দাবি করে তিনি আর্জির সঙ্গে ১০৮ পৃষ্ঠার তথ্যপ্রমাণও জুড়ে দেন। তবে এতে সালমান বা তার প্রতিষ্ঠানের কিছুই হয়নি, বরং শেষ পর্যন্ত বদলি হন সেই ইউএনও।
ছেলের গাড়ি বিলাস
এক মাস আগে এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, জনগণের টাকা লুট করে সালমান এফ রহমানের ছেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাস বহুল রিসোর্টে তিনদিনের বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন। জনগণের টাকা লুট করে তাকে বিলাস বহুল গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান রহমানের দামি জি ৫৩ গাড়ি ব্যবহার করেন। এই গাড়ির দাম ৩ লাখ মার্কিন ডলার। রোলস রয়েসের গ্লোভের একটি গাড়ি রয়েছে তার সংগ্রহে, যার দাম ৪ লাখ ডলার। রেইজ রোলার গাড়ি তার কালেকশনে আছে, যে গাড়ির দাম আড়াই লাখ মার্কিন ডলার। ফেরারি রোমা গাড়ি দেখা দেখা গেছে তার সংগ্রহে। সেই গাড়ির দাম সাড়ে ৩ লাখ মার্কিন ডলার। ল্যামবারগিনি গাড়ি রয়েছে তার, যার মূল্য আড়াই লাখ ডলার। রয়েছে মেট ল্যাবেনের রেসিং কার, যেটির মূল্য দেড় লাখ মার্কিন ডলার।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)