বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম চলমান। প্রথম ধাপের আবেদন শেষ হবে ১১ জুন। ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখের বেশি ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করেছেন। অনলাইনে আবেদন করলেও ভর্তি ফি পরিশোধ করতে পারছেন না। আবেদন করে ভর্তি ফি পরিশোধ না করলে সেই আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। সার্ভার জটিলতায় কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
যদিও শিক্ষাবোর্ড বলছে, ফি পরিশোধ করার জন্য বিকল্প পদ্ধতি দেওয়া হয়েছে। এরপরও যারা ফি পরিশোধ করত পারবে না তাদের দায় বোর্ড নেবে না।
শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, গত ৫ জুন (বুধবার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৩ জন ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। তারা ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০টি ইএসভিজি (কলেজ পছন্দ) দাখিল করেছেন। এরমধ্যে ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫১ আবেদনকারী পেমেন্ট সম্পন্ন করেছেন। এরপর ৬, ৭ ও আজ ৮ জুনের তথ্য এখনও সংগ্রহ হয়নি। কারণ হিসেবে বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনের সঙ্গে পেমেন্ট করার শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশাল গরমিল রয়েছে। সে হিসেবে ওয়েবসাইটে সেই তথ্য আপডেট করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরু থেকেই একাদশ শ্রেণির পেমেন্ট করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন শিক্ষার্থীরা। সে সমস্যা সমাধান করতে না পেলে অবশেষে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ) মাধ্যমে ফি পরিশোধ করার সুযোগ দেয় শিক্ষাবোর্ড। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি আবেদনের জন্য দেওয়া টাকা কেটে নেওয়া হলেও পেমেন্ট সম্পন্ন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। আবার কেটে নেওয়া টাকা ফেরতও আসেনি। ফেরত দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা। আবার নতুন করে পেমেন্ট করতে পারছে না। শিক্ষাবোর্ড আবার জানিয়েছে, ১১ জুনের মধ্যে পেমেন্ট সম্পূর্ণ না হলে ভর্তির আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ভর্তি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
এদিকে পেমেন্ট নিয়ে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে স্মার্ট ভর্তির সিস্টেমে আবেদন করেছেন কিন্তু পেমেন্ট সম্পন্ন করেননি, তাদেরকে অতি সত্বর পেমেন্ট সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। পেমেন্ট সম্পন্ন করার সময়সীমা ১১ জুন রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের পরও পেমেন্ট সম্পন্ন না করা হলে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
পেমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে কিনা বোঝার জন্য এই (https://docs.google.com/document/d/e/) লিঙ্কের চেক করতে বলা হয়। যাদের পেমেন্ট করার পরও সিস্টেমে পেমেন্ট বকেয়া দেখাচ্ছে তারা এই লিঙ্কে বারবার দেখার জন্য বলা হয়েছে। এই তালিকা কিছু সময় পর পর হালনাগাদ হয় বিধায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী একসঙ্গে অনলাইনে পেমেন্ট করায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। যদি কারও পেমেন্ট না হয় সে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এবার কলেজ ভর্তিতে অনলাইনে ফি পরিশোধের জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে সোনালী ব্যাংক এবং এসএসএল কমার্জ। ভর্তিচ্ছুরা যেই ব্যাংক বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) থেকেই আবেদন করুক না কেন ফি সরাসরি জমা না হয়ে গেটওয়ের মাধ্যমে পরিশোধ হয়। বিদ্যমান সক্ষমতা দিয়ে বিপুলসংখ্যক ভর্তিচ্ছুর পেমেন্ট রিকোয়েস্ট তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে গেটওয়েগুলোকে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা হচ্ছে এবং তা সমাধানের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারপরও কোনো শিক্ষার্থীর পেমেন্ট দেওয়ার পরও পেমেন্ট শো না করলে তাকে বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। অভিযোগ পাওয়া পর তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন বাতিল করতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী আবেদন বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন বাতিলের সাথে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট পেমেন্টও বাতিল হয়ে যাবে। নতুন করে আবেদন করার পর পুনরায় আবেদন ফি প্রদান করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থী ‘আবেদন বাতিল’ কিংবা ‘মোবাইল নম্বর পরিবর্তন’ করা প্রয়োজন, তারা অনলাইনে ওয়েবসাইটে দেওয়া ফর্মটি ব্যবহার করে কীভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে তার ভিডিও টিউটোরিয়াল দেওয়া আছে। সেখানে আবেদন করার পর সেই লিঙ্কে স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন।
এর আগে সার্ভারে জটিলতার কারণে একাদশ শ্রেণির ভর্তি আবেদন যথাসময়ে শুরু হয়নি। পূর্বঘোষিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী গত ২৬ মে সকাল থেকে ভর্তি আবেদন শুরুর কথা ছিল। তবে সে সময় অনেকে ওয়েবসাইটে প্রবেশে জটিলতায় পড়েন। পরে ‘লিঙ্গ অপশন’সহ অন্য সমস্যার সমাধান করলে আবেদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। আবেদনের পোর্টালে আবেদনকারীর লিঙ্গ ভুল দেখানো সংক্রান্ত একটি ত্রুটি গত ২৮ মে সকাল ১০টার দিকে সমাধান করা হয়েছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)