শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বলিউডে এর আগেও বেশ কয়েকটি দৃষ্টিশক্তিহীন চরিত্র নিয়ে সিনেমা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘অনুরাগ’, ‘স্পর্শ’,‘ব্ল্যাক’,‘ধনক’‘কাবিল’প্রভৃতি। এবার জন্মান্ধ এক যুবকের সাফল্যের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘শ্রীকান্ত’। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে ভারতের অন্যতম শিল্পপতি শ্রীকান্ত বোল্লার জীবন ও কর্ম নিয়ে। সিনেমাটি আগামীকাল ভারতজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে। চলুন জেনে নিই শ্রীকান্ত বোল্লা সম্পর্কে কিছু কথা।
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের মচ্ছিপত্তনম শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত হতদরিদ্র গ্রাম সীতারামপুরম। সেই গ্রামের গরিব কৃষক দামোদর বোল্লা-ভেঙ্কটাম্মা দম্পতির ঘরে ১৯৯২ সালে দৃষ্টিশক্তিহীন হয়েই জন্ম শ্রীকান্তের। জন্মের পরই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে না এ শিশু। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল গরিব কৃষক দম্পতির। গ্রামবাসী বলেছিল শিশুটিকে বালিশচাপা দিয়ে মেরে ফেলতে। কারণ এ ছেলে পৃথিবীর বোঝা। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ঠাকুমা।
গ্রামবাসীকে বলেছিলেন,‘সমস্যা আমাদের, আমরাই বুঝে নেব।’কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় পদে পদে কিশোর শ্রীকান্তকে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সীতারামপুরমের মাটিতে লড়াই শুরু করেছিল দৃষ্টিহীন শিশু ‘শ্রীকান্ত বোল্লা’। ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই বন্দি থাকতে হতো। তার সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বলত না। জানালার ধারে সারাদিন বসে থাকত। কান পেতে শুনত গ্রামের বাচ্চাদের হুটোপুটির শব্দ। মন চাইত ছুটে যেতে। শ্রীকান্তের বয়স যখন চার,ঠাকুমা অনেক লড়াই করে শ্রীকান্তকে ভর্তি করেছিলেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে নিদারুণ লাঞ্ছনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল শ্রীকান্ত। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে তাকে বসিয়ে রাখা হতো।
দৃষ্টিহীনতা শ্রীকান্তকে কোনো দিনই পড়াশোনা থেকে দূরে রাখতে পারেনি। খুব ছোট্ট বয়স থেকেই অন্য ছাত্রদের চেয়ে সে দারুণ মেধাবী। সাত বছর বয়সে শ্রীকান্তকে ভর্তি করা হয় হায়দরাবাদের একটি স্কুলে। গ্রাম থেকে ৩৪১ কিলোমিটার দূরে থাকা দেবনার স্কুল ফর দ্য ব্লাইন্ডে হোস্টেলে উঠেছিল শ্রীকান্ত। মা ও ঠাকুমার জন্য মন কাঁদত তার। ঠিক সেই সময় ছোট্ট শ্রীকান্তকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন ইংরেজি শিক্ষক স্বর্ণলতা টাক্কালিপতি।
এক সময় শ্রীকান্ত চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় একজন দৃষ্টিহীন ছাত্র কোনোভাবেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না। নিজের অদম্য জেদ, ইচ্ছাশক্তি আর সহনশীলতা শ্রীকান্তকে সাহস দেয় সিস্টেমের বিপরীতে লড়তে। ঘটনাক্রমে শ্রীকান্তের সঙ্গে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল কালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রথম দৃষ্টিশক্তিহীন ছাত্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে এমআইটিতে পড়তে চলে যায় শ্রীকান্ত। পড়া শেষে ফিরে আসে ভারতে। বন্ধুসম ব্যবসায়িক অংশীদার রবি মান্থারের সহযোগিতায় বোল্যান্ট ইন্ডাস্ট্রি শুরু হয়। এই সিনেমায় শ্রীকান্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে,অভিনয়ের দিক থেকে রাজকুমার রাও শ্রীকান্তের ভূমিকায় অতুলনীয়,একজন অন্ধ ব্যক্তির শারীরিক ভাষা থেকে আচরণ–সবকিছু নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। আরও জানা গেছে,শুটিং শুরুর আগে শ্রীকান্ত বোল্লার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন রাজকুমার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা ছবিতে দৃষ্টিহীন চরিত্রকে কালো চশমা পরতে দেখি,কিন্তু শ্রীকান্তে সেটা ব্যতিক্রম। ছবিতে রাজকুমার প্রস্থেটিক লেন্স পরেছেন আগাগোড়া।
এই সিনেমায় দেবিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন দক্ষিণের সুপারস্টার সুরিয়ার স্ত্রী ও অভিনেত্রী জ্যোতিকা। এ ছাড়া রয়েছেন আলিয়া ফার্নিচারওয়ালা ও শরদ কেলকার। ছবিটি পরিচালনা করেছেন তুষার হিরানন্দানি এবং প্রযোজনা করেছেন টি-সিরিজের কর্ণধার ভূষণ কুমার, কৃষাণ কুমার ও নিধি পারমার হিরানন্দানি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)