বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে গেয়েছেন কয়েক হাজার গান। তার মধ্যে জনপ্রিয় গানের সংখ্যা যে কত; তাও গুনে শেষ করা যাবে না। তার কণ্ঠ নিঃসৃত গান শোনেনি, বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। সিনেমার গানে তো তিনি অদ্বিতীয়। সেজন্যই তাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। তিনি হলেন কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোর।
আজ (৬ জুলাই) এন্ড্রু কিশোরের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বরে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের এই গায়ক। ২০২০ সালের আজকের দিনে লাখো ভক্তকে শোকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।
এন্ড্রু কিশোরের বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি। তার মা ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর।
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া কিশোর সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতে পাঠ গ্রহণ শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।
এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’।
তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন। ‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি।
১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। গানগুলো— ‘আমার সারা দেহ’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে।
ভারতের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণের সুরে ‘সুরজ’ নামে সিনেমায় এন্ড্রু কিশোর হিন্দি গান গেয়েছিলেন। এ ছাড়া, তার সুরে আরও দুটি বাংলা গান করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।
এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গানের তালিকা করাও ভীষণ কঠিন কাজ। তবুও কয়েকটি গানের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন। যেমন, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘সবাইতো ভালোবাসা চায়’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থাকো’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘ও সাথী রে যেও না কখনো দূরে’, ‘কী যাদু করেছো বলো না’, ‘প্রতিদিন ভোর হয়’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘এতো প্রেম ছিল’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা’, ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ’ ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এ দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক। গান গেয়ে এন্ড্রু কিশোর আকাশছোঁয়া খ্যাতি পেয়েছেন। সেই সঙ্গে জিতেছেন বহু পুরস্কারও। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)