বৃহঃস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১
দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত সানজিদা আক্তারের (৩০) মৃত্যু মাল্টি অর্গান ফেইলরের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং অসুস্থবোধ করলে ঘর থেকে না বেরোনোসহ কিছু নিয়ম মেনে চললে এ ভাইরাসের বিস্তার কমবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘এইচএমপিভি ভাইরাসে একজনের মৃত্যু’ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বুধবার রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এইচএমপিভি আক্রান্ত সানজিদার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার।
তিনি জানান, ওই নারী বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান। তবে তিনি যে শুধু এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্যই মারা গেছেন, এটা বলা যাচ্ছে না। ওনার অন্য আরও শারীরিক জটিলতা ছিল, যার জন্য হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
এর আগে শনিবার (১১ জানুয়ারি) একজনের দেহে এইচএমপিভি সংক্রমণের একটা রিপোর্ট পাওয়া যায়। তিনি এইচএমপিভিতে আক্রান্তের পাশাপাশি ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের বিস্তার আগে থেকেই ছিল। সানজিদা আক্তার প্রথমে বাসার আশপাশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে একমাস পর তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। চার দিন পর তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। এরপর তাকে পরীক্ষা করে দেখা যায়— তিনি এইচএমপিভি ভাইরাস পজেটিভ। মাল্টি অর্গান ফেইলরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার নিউমোনিয়া ডেভেলপ করেছিল। শরীরে একটি ভাইরাস ও একটি ব্যাকটেরিয়া ছিল।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান যেটুকু বলেছে এইচএমপিভির কারণে মৃত্যু বিরল। তবে এইচএমপিভি ব্যক্তি যদি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাহলে এ রোগে হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া অল্প বয়সী শিশু ৫ বছরের নিচে এবং বেশি বয়সী মানুষ ৬৫ বছরের ওপরে যদি সিওপিডি অ্যাজমা থাকে তাহলে তাদের কিছুটা ঝুঁকি থাকে।
মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ সবসময়ই এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত থাকে। তবে এইচএমপিভি কখনোই সাধারণভাবে মৃত্যুর কারণ হয় না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় একজন এইচএমপিভি রোগী মারা গেছেন। তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল এবং উন্নতির কারণে তাকে আবার ভেন্টিলেশন থেকে ফিরিয়ে আনাও হয়েছিল। এরপর আবার অবস্থার অবনতি হয়। মৃত্যুর কারণে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে এইচএমপিভির কারণে সরাসরি মৃত্যু হওয়ার কথা বলা হয়নি। এটিতে মৃত্যুর হার খুবই কম। এক হাজারে একজন বলা হয়, তবে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তা-ও না।
তিনি বলেন, সিজনাল ফ্লুর লক্ষণ আর এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ একই। সাধারণ ফ্লু ও এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় কোনো পার্থক্য নেই। এ জন্য আমরা মানুষকে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিতে চাই। যখন অনেক মানুষের মধ্যে যাবেন তখন যাতে মাস্ক পরেন। কেউ অসুস্থ বোধ করলে যাতে ঘরে থাকেন। সাধারণ এ বিষয়গুলো মেনে চললে এ ভাইরাসের বিস্তার কমবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজ্ঞান পরবর্তীতে নির্ধারণ করবে এই ধরনের মৃত্যুগুলোকে কীভাবে ক্যাটাগরাইজ করা হবে। এইচএমপিভিতে মৃত্যুর কোনো ক্যাটাগরি এখন পর্যন্ত করা হয়নি।
এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, গবেষণাধীন দু-একটি ভ্যাকসিনের কথা শোনা যায়। এটি ভ্যাকসিন আকারে আসার সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ পৃথিবীর কোনো দেশেই এখন পর্যন্ত সতর্কতা জারি করা হয়নি। ভাইরাস যখন ছড়ায় তখন এটি মিউটেশন হতে থাকে। বেশি ছড়ালে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। চেষ্টা করতে হবে সার্কুলেশনটা যাতে কম হয়।
এ বিষয়ে সরকারের কী অতিরিক্ত প্রস্তুতি রয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, এটি শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায়। করোনার সময় যে প্রস্তুতি ছিল সেগুলো পুনর্বিন্যাস করলেই আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মূল প্রস্তুতি হলো অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা। সে প্রস্তুতি আমাদের দেশের ৩০টি জেলায় রয়েছে। বাকি ৩৪টি জেলায় আমরা সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও জানান, এইচএমপিভির লক্ষণগুলো হলো- জ্বর, সর্দিকাশি, গা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। এজন্য সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিতে চাই। যখন অনেক মানুষের মধ্যে যাবেন তখন যাতে মাস্ক পরেন। কেউ অসুস্থ বোধ করলে যাতে ঘরে থাকেন। সাধারণ এ বিষয়গুলো মেনে চললে এ ভাইরাসের বিস্তার কমবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে চীনে প্রথম এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। ভাইরাসটিকে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ভাইরাসের কারণে সাধারণত ঠান্ডা জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শীতের মৌসুমে ভাইরাসটি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে এর দ্রুত বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)