বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দেশে বর্তমানে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন আছে ৬ হাজার ৭৫ জন। বছর তিন আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে দেশে এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৬৫৮ জন।
প্রায় প্রতিবছরই দেশে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এইচআইভি প্রতিরোধে প্রচার-প্রচারনা সে তুলনায় খুবই সামান্য। যদিও এইচআইভি প্রতিরোধে সরকারি হাসপাতাল বিনামূল্যে রোগীদের ওষুধ সরবরাহ করছে, বিনামূল্যে এইচআইভি নির্ণয়ের অনুমতি দিয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের মধ্যে এইচআইভি প্রতিরোধ সেবা দিচ্ছে। কিন্তু আরও অধিক প্রচার-প্রচারনা হলে মানুষের মাঝে আরো বেশি সচেতনতা তৈরি হতো এবং এইচআইভি প্রতিরোধে ভালো সফলতা আসতো বলে মনে করছেন এইচআইভি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইচআইভি বা এইডস রোগ নির্মূলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৬৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত করা গেছে। তবে এসডিজির প্রথম শর্ত অনুসারে, এ সময়ের মধ্যে ৯৫ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার বাধ্যবাধকতা ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় কাজ করছে সরকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘ প্রদত্ত দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করা হয়েছে, যা ৯৫-৯৫-৯৫ নামে পরিচিত। প্রথমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এসব রোগীর সবাইকে আনতে হবে চিকিৎসার আওতায়। তৃতীয়ত, যেহেতু এইচআইভির এখনো পরিপূর্ণ কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি তাই ৯৫ শতাংশ চিকিৎসারত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসের মাত্রা রাখতে হবে নিয়ন্ত্রিত।
সরকারের এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, প্রথম ৯৫ শতাংশ রোগী শনাক্তের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য অর্জন হয়েছে মাত্র ৬৩ শতাংশ। দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য অর্জন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য ৯৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ২৩টি জেলায় হাসপাতাল অথবা এনজিও ক্লিনিকের এইচআইভি পরীক্ষা ও সেবা প্রদান করা হয়। তবে দেশের সব জেলায় এখনো এই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশব্যাপী এই সেবা থাকলে আরও বেশি এইচআইভি কেস শনাক্ত করা যেত।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এসটিডি, এইডস) ডা. শাহ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সময়নিউজকে বলেন, আগে ২৩ জেলায় সংক্রমণ ছিল, তাই সেখানেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই কার্যক্রম পরিচালিত হতো। আগামী জুলাই থেকে ৬৪ জেলাতেই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা বেড়েছে, তাই এ বছর রোগী কিছুটা বাড়তেই পারে। আমাদের সব লজিস্টিকের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। ওষুধেরও কোনো ঘাটতি নেই। আমরা আশাবাদী, ২০৩০-এর মধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব।’
জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল কর্মসূচির তথ্য বলছে, প্রতিবছর দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন করে এইচআইভি আক্রান্তের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যেখানে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য ফেরত অভিবাসী ও কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাওয়ার আগে সবার এইচআইভি পরীক্ষার বিধান রয়েছে। কিন্তু কেউ দেশে ফেরত আসার পর এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। ফলে ফেরত আসা কেউ এইচআইভি আক্রান্ত কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।
এইচআইভি নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, এইডস থেকে নিজেকে, সমাজকে এবং মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এজন্য ব্যক্তি সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আমাদের আবাসভূমি নতুন প্রজন্মের জন্য সব ধরনের রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখব, এই হোক আগামী দিনের অঙ্গীকার।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)