সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
পায়ের শিরায় শিরায় টান ধরা কিংবা রাতে অসহ্য যন্ত্রণার কারণ শুধু পেশির ক্লান্তি নয়, এটিও হার্টের রোগ। যেমন রক্ত জমাট বেঁধে শিরায় সমস্যা তৈরি হওয়া কিংবা পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজের লক্ষণ হতে পারে। হার্টের রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার সিরোসিস এবং রেস্টলেস লেগস সিনড্রোমের মতো স্নায়ুবিক সমস্যা থেকেও পায়ে টান কিংবা যন্ত্রণা হতে পারে।
আর হাঁটুর নিচ থেকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, পায়ের ব্যথা মানেই বাত ব্যথা নয়। পায়ের ব্যথা মানেই তা কেবল পেশির যন্ত্রণা, তা নাও হতে পারে। তাই যদি আপনার পায়ে ক্রমাগত টান, ব্যথা কিংবা অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে— পায়ে যন্ত্রণা হওয়ার মানে এই নয় যে, সমস্যা শুধু পায়েই সীমাবদ্ধ থাকে, তা দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। ‘পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ’ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই ‘করোনারি আর্টারি ডিজিজ’-এর ঝুঁকি বাড়ে। এতে হার্টের ধমনীতে রক্তপ্রবাহ বাধা পায়, তখন হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যেতে থাকে, যা হৃদরোগের কারণ হয়ে ওঠে।
আর শিরায় শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে তা বড় বিপদের লক্ষণও হতে পারে। তবে পায়ের ব্যথা হার্টের রোগের একটি লক্ষণ বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। হার্ভার্ড মেডিসিন স্কুলের গবেষণা বলছে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত ছড়িয়ে পড়ে ধমনীর মধ্য দিয়ে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেই ধমনীগুলোর ভেতর স্নেহ পদার্থের আস্তরণ তৈরি হয়। ফলে রক্ত চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে আসতে পারে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘প্লাক’ তৈরি হওয়া।
আর এ ধরনের প্লাক তৈরি হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত পৌঁছানোয় সমস্যা দেখা দেয়। দেহের প্রান্তিক অঙ্গগুলোলির ধমনীতে তৈরি হওয়া এ সমস্যাকেই বলে ‘পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ’ বা ‘পিএডি’। রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় পায়ের শিরা ফুলে ওঠে, তখন প্রচণ্ড প্রদাহ হয়, ফলে পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। এই ‘পিএডি’ অনেক ক্ষেত্রেই হৃদরোগের সংকেত দিয়ে থাকে।
‘ন্যাশনাল হার্ট, লাং, ব্লাড ইনস্টিটিউট’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ তাদেরই বেশি হয়, যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল আছে। মূলত মানুষের দেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন, অন্যটি লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি খারাপ কোলেস্টেরল। খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলেই রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
আর হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়ার একটি লক্ষণই হলো পায়ের পেশিতে ব্যথা। রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ২০০ মিলিগ্রাম হওয়া উচিত। তা যদি বেড়ে গিয়ে ২৪০ মিলিগ্রাম হয়ে যায়, তাহলেও বলা হয় কোলেস্টেরল বাড়ছে। কিন্তু যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন রক্তে এত বেশি প্রোটিন ও ফ্যাট জমা হতে শুরু করে, যা রক্তজালিকাগুলোকে ছিঁড়ে দেয়। ফলে রক্তপ্রবাহ বাধা পায়। এর প্রভাব পড়ে হার্টেও।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)