শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার পূর্বাঞ্চলে একের পর এক শক্তিশালী শীতকালীন ঝড়ের কারণে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে ৬ লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি।
এছাড়া ফ্লোরিডায় শক্তিশালী বাতাসের কারণে বহু গাড়ি উল্টে গেছে এবং বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। এই অঞ্চলেও বেশ কয়েকটি টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মার্কিন ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্ল্যাইট অ্যাওয়ার-এর তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বা বাইরে গমনকারী ১৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া খারাপ আবহাওয়ার কারণে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিমানও ডাইভার্ট করতে হয়েছে।
কমলা হ্যারিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার’ জন্য আটলান্টা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার পথে মেরিল্যান্ডের পরিবর্তে ভার্জিনিয়ায় মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্টের বিমান অবতরণ করতে হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে ৬ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। এছাড়া ফ্লোরিডার কয়েক ডজন কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় ঝড়ের কারণে বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে এবং বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার ফ্লোরিডা, আলাবামা এবং জর্জিয়াজুড়ে ১২টি টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে। এসব টর্নেডো ওই এলাকাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং কিছু এলাকায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানও শুরু করতে হয়েছে।
টর্নেডো আঘাত হানার পর আলাবামার হিউস্টন কাউন্টিতে ৮১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা নারী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া উত্তর ক্যারোলিনার ক্লারমন্টে একজন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আর জর্জিয়ার ক্লেটন কাউন্টিতে একজন মোটরচালক মারা গেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঝড়ের মধ্যে হাইওয়েতে তার গাড়ির ওপর গাছ ভেঙে গাড়িকে পিষে ফেলার পর তিনি প্রাণ হারান।
ফ্লোরিডার পানামা সিটির একজন বাসিন্দা বলেছেন, ঝড়ের কারণে ‘মালবাহী ট্রেন ইটের দেয়ালে আঘাত করার’ মতো শোনাচ্ছে। বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে তিনি বলেন, ‘এটা (বাতাস) এতোটাই জোরে ছিল।’
বিবিসি বলছে, ঝড়ের কারণে পানামা সিটিতে বহু রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানকার বহু ভবনের ছাদ উড়ে গেছে এবং বেসবলের আকারের শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শহরের কেন্দ্রস্থল এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।
বে কাউন্টি শেরিফের অফিস ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছে, ‘অন্ধকারের মধ্যে এই এলাকায় কারও ঘোরাঘুরি করা উচিত নয়।’
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস) সতর্ক করে বলেছে, আরও শক্তিশালী ঝড় এই অঞ্চলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের অন্য কোথাও অবস্থান করছে।
নিউ জার্সিতে বুধবার পর্যন্ত উপকূলীয় বন্যার সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে। অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর ফিল মারফি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং বাসিন্দাদের ঝড়কে ‘অবহেলা’ না করতে সতর্ক করেছেন।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হচুল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই ঝড় ‘জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ’ হতে পারে, বিশেষ করে যেহেতু প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তুষারপাতও হবে। একইসঙ্গে এই বৃষ্টি সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যারও সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া ব্রুকলিনের একটি এয়ারফিল্ডে তাঁবুতে বসবাসকারী প্রায় ২ হাজার অভিবাসীকে ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে সরিয়ে নিয়েছে।
মারাত্মক এই আবহাওয়া নেব্রাস্কা এবং কানসাসের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতেও রাস্তায় চলাচল ব্যাহত করেছে। কানসাস অঙ্গরাজ্যের একজন সৈন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘দয়া করে বাড়িতে থাকুন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আপনি আটকে গেলে আমরা আপনাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবো না, কারণ আমাদের কাছাকাছি যেতেও সমস্যা হচ্ছে।’
এনডব্লিউএস বলেছে, বুধবারের মধ্যে চরম এই আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও মধ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিছু এলাকায় এখনও তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)