বৃহঃস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১
প্রায় ১৫ মাস ব্যাপক সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েল। দু’পক্ষের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত।
২০০৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে গাজায় ক্ষমতাসীন হয় হামাস। তারপর অল্প সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অর্ন্তভূক্ত গোষ্ঠী-দলগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
বস্তুত, ২০০৬ সালের পর আর নির্বাচন হয়নি গাজায়। ফলে, হামাস গত প্রায় ১৯ বছর ধরে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা ঘটেছিল এবং যার জেরে গত ১৫ মাস ধরে গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল— সেই হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং নেতৃত্বের ভূমিকায়ও ছিল হামাস।
এখন প্রশ্ন হলো, যদি সত্যিই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, সেক্ষেত্রে এত রক্তক্ষয়ী একটি যুদ্ধের পরও কি গাজা উপত্যকার নেতৃত্বে হামাসই থাকবে? না কি অন্য কোনো দল বা গোষ্ঠী আসবে এই ভূমিকায়?
২০২৪ সালে এএফপিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম। সেখানে তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পর আর গাজা শাসনের দায়িত্বে থাকতে চাইছে না হামাস।
“(যুদ্ধবিরতির পর) আমরা আর গাজা উপত্যকার নির্বাহী দায়িত্বে ফিরে আসতে চাই না,” এএফপিকে বলেছিলেন তিনি।
আর একটি সূত্র সম্প্রতি এএফপিকে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার বেসামরিক প্রশাসন নির্বাহের দায়িত্ব অন্য কোনো ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস।
হামাসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়াসির আবু হেইন এএফপিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “স্থায়ী যুদ্ধবিরতি জারির পর হামাস আর ক্ষমতায় থাকতে চায় না এবং জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ফিলিস্তিনের নেতারা অবশ্য বলেছেন যে গাজার জনগণ যাদের চায়, তারাই উপত্যকা শাসন করবে। সেক্ষেত্রে জনগণ যদি চায়, তাহলে যুদ্ধের পর আবার আগের মতো উপত্যকা নিয়ন্ত্রণের পথ হামাসের সামনে খোলা।
তবে সম্প্রতি কায়রোতে হামাস এবং ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন ফাতাহের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা এই মর্মে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) মনোনীত যে কোনো দল বা গোষ্ঠী গাজাকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।”
এদিকে যুদ্ধের প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন যুদ্ধোত্তর গাজা পুনর্গঠনের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। এ ইস্যুতে পিএকে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
২০০৬ সালের নির্বাচনের পর গাজার রাজনীতিতে থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অপসৃত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একেবারে হারিয়ে যায়নি। গাজার পৌরসভাগুলোতে এখনও তাদের অবস্থান রয়েছে। পৌর প্রশাসনে যারা চাকরি করেন, তাদের বেতন দেয় পিএ।
তাছাড়া হামাস ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এতদিন ধরে গাজার ‘লাইফলাইন’ নামে পরিচিত রাফা ক্রসিং ব্যবস্থাপনার কাজটিও করে আসছে পিএ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)