সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১


ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ধনকুবের সহযোগী ইলন মাস্কের সরকার সংস্কার ও প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্ব বাড়ানোর বিরুদ্ধে এটি একটি বড় বিক্ষোভ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

শনিবার (৫ এপ্রিল) স্থানীয় সময়ে ওয়াশিংটনে বৃষ্টির মধ্যেও ট্রাম্পবিরোধীরা বিক্ষোভ করেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এছাড়া ন্যাশনাল মলে একটি সমাবেশে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন ধারণা করা হচ্ছে।

ইভেন্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৫০টি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ এতে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছে। প্রায় ৫০টি অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়।

নিউ জার্সির প্রিন্সটনের অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী টেরি ক্লেইন ওয়াশিংটন মনুমেন্টের নিচের মঞ্চে জড়ো হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পুরো দেশ অস্থিরতার মধ্যে আছে। অভিবাসন থেকে শুরু করে ডিওজিই কর্মী ছাঁটাই, এ সপ্তাহে শুল্ক আরোপ, শিক্ষা; সবকিছুতে ট্রাম্পের নীতির প্রতিবাদ জানাতে সমাবেশে যোগ দিয়েছি।”

দিনভর চলা বিক্ষোভে কারো হাতে ছিল ইউক্রেনের পতাকা। আবার কেউ কেউ ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ স্কার্ফ পরেছিলেন। তাদের হাতে ছিল “ফ্রি প্যালেস্টাইন” লেখা পোস্টার। ওই সময়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটরা মঞ্চে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন।

এদিকে, ওহাইও’র ২০ বছর বয়সী ইন্টার্ন কাইল নামের ট্রাম্পের এক সমর্থক “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” টুপি পরে ওয়াশিংটন ডিসির সমাবেশের এক প্রান্তে হাঁটছিলেন। এ সময় তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিতর্কে জড়াচ্ছিলেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্ট্যামফোর্ডের ৭৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি পল ক্রেটশম্যান বলেন, “ প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি। আমার উদ্বেগ হলো সামাজিক সুরক্ষা ধ্বংস হতে যাচ্ছে।”

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ও বেশ কয়েকটি দেশে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মিত্র ইলন মাস্কবিরোধী বড় বড় সমাবেশ হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সংগঠকরা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১,২০০ বেশি “হ্যান্ডস অফ!” প্রতিবাদ আয়োজনের লক্ষ থাকলেও হয়েছে ১,৪০০ এরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটলগুলোতে, ফেডারেল ভবনগুলোর সামনে, কংগ্রেসনাল দপ্তর, সোশ্যাল সিকিউরিটি সদর দপ্তর, পার্ক ও সিটি হলগুলোর সামনে এসব প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। এসব আন্দোলনকারীরা ধনকুবেরদের ক্ষমতা দখলের অবসান চান।

সংগঠকরা বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করতে পারি তারা আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে।”

এই আয়োজনের প্রচারপত্রে লেখা ছিল, “আমাদের গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ, চাকরি ছাঁটাই, গোপনীয়তার ওপর আক্রমণ অথবা আমাদের পরিষেবার ওপর আক্রমণের কারণে আপনি যেভাবেই সংঘবদ্ধ হোন না কেন, এই মুহূর্তটি আপনার জন্য। আমরা এই সংকটের বিরুদ্ধে একটি বিশাল ও দৃশ্যমান জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাই।”

আয়োজক সংগঠনগুলোর অন্যতম ইন্ডিভিসিবলের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬ লাখ মানুষ এসব প্রতিবাদে যোগ দেবে জানিয়ে স্বাক্ষর করেছে। লন্ডন, প্যারিসের মতো বড় বড় শহরেও কিছু প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইন্ডিভিসিবলের পাশাপশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা, নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলো, শ্রমিক ইউনিয়ন ও এলজিবিটিকিউ প্লাস আন্দোলনকারীরা এ প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

সংগঠকরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি তিনটি: ধনকুবেরদের ক্ষমতা দখলের এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক দুর্নীতির অবসান; শ্রমজীবীরা নির্ভর করে এমন সরকারি স্বাস্থ্য ইন্স্যুরেন্স কর্মসূচি (মেডিকেড), সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য কর্মসূচির জন্য ফেডারেল তহবিল হ্রাস বন্ধ করা; আর অভিবাসী, ট্রান্সজেন্ডার লোকজন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের ইতি ঘটানো।”

ওয়াশিংটন ডিসিতে “হ্যান্ডস অফ!” প্রতিবাদ চলাকালে মার্কিন কংগ্রেসের অনেক প্রতিনিধি এসব সমাবেশে যোগ দেন। তাদের অনেকেই মঞ্চে ওঠে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে কথা বলেন।

মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জেমি রাসকিন বলেন, “মুসোলিনির রাজনীতি ও হার্বাট হুভারের অর্থনীতি নিয়ে আছেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট থাকলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা এমন একটি সংবিধান লিখেছিলেন যা ‘আমরা স্বৈরশাসক’ দিয়ে শুরু হয়নি, প্রস্তাবনায় ‘আমরা জনগণ’ বলা হয়েছে।”

ওয়াশিংটন স্মৃতিস্তম্ভে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশে রাসকিন আরও বলেন, “নৈতিক কোনো মানুষই অর্থনীতির পতন ঘটানো একজন স্বৈরশাসক চান না, যিনি সব কিছুর দাম জানেন কিন্তু কোনো কিছুরই মূল্য বোঝেন না।”

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের হাতেই ট্রাম্প প্রশাসনের নিন্দা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন লোকজন প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য দেশটির বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে গিয়ে হাজির হন। ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলের সামনে জড়ো হওয়া প্রতিবাদকারীরা স্লোগান দেন, “হেই হো, ট্রাম্প গোটা গো।” অনেকের হাতেই বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এর একটিতে লেখা ছিল “আমাদের সংবিধান রক্ষা কর”, আরেকটিতে “আমাদের অধিকার থেকে হাত সরাও”।

মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ইলহান ওমর বলেন, “আপনি যদি এমন একটি দেশ চান যা এখনও যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে, আমাদের তার জন্য লড়াই করতে হবে।”

লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রতিবাদকারীরা প্রায় এক মাইল লম্বা মিছিল নিয়ে সিটি হলের দিকে যান। এ সময় তারা স্লোগান দেন, “জনগণকে ক্ষমতায়ন কর”। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “শিক্ষা থেকে হাত সরাও”, “প্রতিরোধ কর, প্রতিরোধ কর”।

এর পাশাপাশি বোস্টন, শিকাগো, নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও বহু শহরে “হ্যান্ডস অফ” প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ এটি।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ৪:৩০ ভোর
যোহর ১২:০২ দুপুর
আছর ০৪:৩০ বিকেল
মাগরিব ০৬:২০ সন্ধ্যা
এশা ৭:৩৩ রাত

সোমবার ৭ এপ্রিল ২০২৫