মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১
ছবি সংগৃহীত
যত দূর দেখা যায়, মাইলের পর মাইল... কঙ্কালসার চেহারা নিয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি পোড়া, ভাঙাচোরা বাড়ি।
নিষ্প্রাণ ‘মৃত্যু উপত্যকায়’ কারো বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ। দক্ষিণ গাজা ভূখণ্ডের রাফা অঞ্চলের এমন বেশ কিছু ছবি ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় প্রশাসন দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে রাফার ৯০ শতাংশ বসতবাড়ি। ‘গণহত্যা চালিয়ে কোনো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ নিদর্শন তৈরি করেছে ইসরায়েল।’
১২ হাজার বর্গমিটার এলাকা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। যে কয়েকজন মানুষ এখনো বেঁচে আছেন, তাদের ঠাঁই খোলা আকাশের নিচে। ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না গত এক মাস ধরে। খাবার নেই, পানীয় জল নেই। ২২টি পানির উৎস (ওয়াটার ওয়েল) ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
ফলে পানীয় জলের জোগান নেই। এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থা বলতেও কিছু আর নেই। নোংরা-আবর্জনায় ভরে গিয়েছে এলাকা। সেই সঙ্গে পঁচাগলা দেহাংশ। জটিল রোগ সংক্রমণের ভয় পাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।
এর মধ্যে রাফার ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটাও আর কাজ করছে না। আবু ইউসেফ আল-নাজার হাসপাতালও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে এই হাসপাতালটি ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আটটি স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শতাধিক মসজিদ ছিল রাফায়। তার সবই হয় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা ভূখণ্ডে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, গাজাকে হামাস-মুক্ত করেই ছাড়বেন তিনি। অতএব... হত্যা চলবে। ইমরায়েল-হামাস যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫০,৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
সংখ্যাটা আরও বেশি হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। কমপক্ষে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি নিহত ৫০ হাজারের মধ্যে ২০ হাজারই জঙ্গি।
গাজার একটা বড় অংশ দখল করার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। লক্ষ্যপূরণে এলাকার পর এলাকা সাফাই (হত্যাযজ্ঞ) চলছে।
রোববার ভোররাতের অন্ধকারে গাজার খান ইউনিসে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ঘুমের মধ্যেই ১৫ জন মারা গিয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জনই নারী ও শিশু। একটি বসতবাড়ি ও তার আশপাশের বেশ কিছু অস্থায়ী ছাউনি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
নিহতদের মধ্যে এক সাংবাদিকও রয়েছেন। খান ইউনিসের এক বাসিন্দা মহম্মদ আবু উদা জানান, রোববার সকালে তার বাড়ির ওপরে ভেঙে পড়ে পাশের বাড়ি। তাতেই ঘুম ভেঙে যায় তার। কোনো মতে পালান তিনি।
তিনি বলেন, একটা প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ। গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। প্রতিবেশীদের খুঁজতে গিয়ে পাই টুকরো টুকরো দেহাংশ... পাশের বাড়িটা এখন লোহা-পাথরের স্তূপ। আর আগুনে পুড়ে যাওয়া কিছু স্মৃতি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)