শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২


জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

রাখাইনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তীব্রতর, সেদ্ধ কচু-লতাপাতা খেয়ে বাঁচছে মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:১৬ আগষ্ট ২০২৫, ১১:১৫

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, জরুরি সহায়তা না পেলে পরিস্থিতি ‘পূর্ণাঙ্গ বিপর্যয়ে’ রূপ নিতে পারে। সংস্থাটির দাবি, দ্রুত বাড়তে থাকা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে খাবার সরবরাহের চেষ্টা করা হলেও সংকট দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। খবর বিবিসির।

খাদ্যঘাটতির শিকারদের মধ্যে রয়েছেন ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে সর্বস্ব হারানো প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সারাদেশে গৃহযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও, সামরিক অবরোধে রাখাইনের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সংকটের কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে সিত্তে শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্যাভাবে দিশাহারা এক ব্যক্তি কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেন। একইভাবে জুনে খাদ্যঘাটতির কারণে এক রাখাইন পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি খাদ্যের অভাবে আত্মহত্যা করেছেন এক বৃদ্ধ দম্পতিও।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তাদের বৈশ্বিক তহবিল চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে মিয়ানমারে তীব্র খাদ্যসংকটে থাকা জনগণের মাত্র ২০ শতাংশকে সহায়তা দিতে পারছে তারা। বছরের শুরু থেকেই প্রদেশটিতে খাদ্য সংকটে ভোগা পরিবারের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। কিন্তু তহবিল সংকটের কারণে মার্চে সংস্থাটিকে রাখাইনে সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হতে হয়।

২০২৩ সালে সামরিক জান্তা সরকার আরাকান আর্মিকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ ঠেকাতে রাখাইনের সব ধরনের বাণিজ্য ও পরিবহন রুট বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে সিত্তে শহরে পৌঁছানো সম্ভব কেবল সমুদ্র বা আকাশপথে। কৃষকরা মাঠে ফসল ফলাতে পারছেন না, আর রোহিঙ্গাদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে জীবিকার সব পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় এক আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘বাইরে যাওয়া যায় না, কাজ নেই। বাজারে দ্রব্যমূল্য পাঁচগুণ বেড়েছে। আয় না থাকায় অনেকেই সেদ্ধ কচু আর লতাপাতা খেয়ে বেঁচে আছে।’ এ অবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামরিক বাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ। যে পরিবার তাদের পুরুষ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, তাদের আর্থিক জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, রাখাইনের সব সম্প্রদায়ই গভীর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। অনেকে ঋণ করছে, ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করছে, সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে, এমনকি মানব পাচারের শিকার হচ্ছে। যদিও সংস্থাটি সরাসরি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি, তবে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে ইউএসএইডের ৮৭ শতাংশ তহবিল কমানো বর্তমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। গত বছর একাই যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএফপিকে প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘ রাখাইনে ‘আসন্ন দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে সতর্ক করেছিল। নয় মাস পরও সেই তহবিল ঘাটতি পূরণ না হওয়া এবং নতুন করে সাহায্যের আবেদন জানাতে হওয়া বর্তমান মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট করছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:১৪ ভোর
যোহর ১২:০৩ দুপুর
আছর ০৪:৩৮ বিকেল
মাগরিব ০৬.৩৫ সন্ধ্যা
এশা ০৭:৫১ রাত

শনিবার ১৬ আগস্ট ২০২৫