মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসামের বিশ্বনাথ জেলায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। রোববার থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে ৩০৯টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইর খবর অনুসারে, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাভাষী মুসলিম।
বিশ্বনাথের জাপারিগুড়ির ভিলেজ গ্রেজিং রিজার্ভের (ভিজিআর) প্রায় ১৭৫ বিঘা জমি বেআইনিভাবে দখল করা হয়েছিল বলে অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তাদের। জেলা প্রশাসক সীমান্তকুমার দাস জানান, ৩০৯টি পরিবার ওই ১৭৫ বিঘা জমি দখল করে রেখেছিল। ১ আগস্ট তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল ১৫ দিনের মধ্যে এলাকা খালি করে দেওয়ার জন্য। রোববার শান্তিপূর্ণভাবেই গোটা প্রক্রিয়া চলেছে বলে দাবি জেলা শাসকের।
তিনি বলেন, নোটিশ পাওয়ার পর সব পরিবারই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে নিজেরাই নিজেদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিল। বাকি বাড়িগুলো রোববার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই কাজের জন্য এলাকায় ৬০০ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। অভিযানে ২০টি বুলডোজার এবং বেশ কিছু ট্রাক্টরও ব্যবহার করা হয়।
আরেক কর্মকর্তা জানান, জমি দখল করে যারা ওই এলাকায় বাস করছিলেন, তাদের বেশির ভাগই বাংলাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীর। রোববার বিশ্বনাথ জেলার ওই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (এএএমএসইউ) সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আলি সরকার। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। সাধারণ মানুষকে অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। কুদ্দুসের দাবি, যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।
এদিকে সরকারি জমির ওপর দখল উচ্ছেদে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়েছে বেশ কয়েকটি জাতিগত সংগঠন। তারা রাজ্যে ‘মিঞা খেদা আন্দোলন’ (মিয়াদের তাড়ানোর আন্দোলন) শুরু করেছে। ‘মিঞা’ মূলত আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য ব্যবহৃত একটি অবমাননাকর শব্দ এবং অবাঙালি ভাষাভাষী লোকেরা সাধারণত তাদের বিদেশি অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সম্প্রদায়ের কর্মীরা এই শব্দটিকে অবাধ্যতার ইঙ্গিত হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন, ‘আগ্রাসন’ নিম্ন ও মধ্য আসামের জনসংখ্যার পরিবর্তন করেছে এবং উত্তর আসামেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টতই মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন।
সম্প্রতি বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধবাসীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। কখনও কখনও ওই রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশি সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদেরও হেনস্তা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এই বিতর্কে আসাম সরকারেরও নাম জড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে অভিযোগ তোলেন, বাংলাদেশি সন্দেহে কিছু ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়ে রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছে আসাম সরকার। খবর এনডিটিভির।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)