শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২


পরমাণু ইস্যুতে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা শঙ্কায় ইরানের দৌঁড়ঝাঁপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:২৩ আগষ্ট ২০২৫, ১০:৪৯

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে ইরান। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল এড়াতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শুক্রবার (২২ আগস্ট) ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ইউরোপীয় দেশগুলোর দেওয়া সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি।

ইউরোপীয় তিন দেশ সতর্ক করেছে, ইরান যদি দ্রুত কোনো ‘সন্তোষজনক সমাধান’ না দেয়, তবে তারা চলতি মাসের শেষেই ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ ধারা সক্রিয় করবে। এই ধারার মাধ্যমে চুক্তির যেকোনো পক্ষ ইরানকে অমান্যকারী ঘোষণা করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ফেরত আনতে পারে।

জুন মাসে ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধের সময় তেহরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার পর ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে সব সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। ফলে ইরানের হাতে থাকা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদের সঠিক অবস্থা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যত অন্ধ হয়ে গেছে। এ মাত্রা থেকে মাত্র একটি ছোট প্রযুক্তিগত ধাপ পেরোলেই অস্ত্রগ্রেড ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পাওয়া সম্ভব।

ইরান দাবি করে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে দেশটি একমাত্র অণু অস্ত্রমুক্ত রাষ্ট্র, যারা এত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, আইএইএ এবং অন্যান্য সংস্থা বলছে, ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি ছিল।

ফোনালাপের পর আরাঘচি টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর ‘আইনি ও নৈতিক যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তবে আলোচনায় অব্যাহত থাকার কথাও জানান।

‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যেমন আত্মরক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেয়, তেমনি কখনো কূটনীতির পথ ছাড়েনি। ইরানি জনগণের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিত করে এমন যেকোনো সমাধানের জন্য ইরান প্রস্তুত,’ বলেন আরাঘচি।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামী সপ্তাহে আরেক দফা আলোচনা হবে।

‘আমরা ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ করেছি। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি,’ তিনি লিখেছেন। ‘সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।’

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুলও এক্স-এ সতর্ক করে লিখেছেন, ‘সময় খুবই কম। ইরানকে অর্থবহভাবে আলোচনায় যুক্ত হতে হবে, নইলে স্ন্যাপব্যাক কার্যকর হয়ে যাবে। যাচাইযোগ্য ও টেকসই সমঝোতা না হলে আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হতে দেব না।’

৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়

ইউরোপীয় দেশগুলো ৮ আগস্ট এক চিঠিতে সতর্ক করেছিল, ইরান সন্তোষজনক সমাধান না দিলে ৩১ আগস্টের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু হবে। এতে ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে হাতে খুব কম সময় রয়েছে।

আলোচনার মূল শর্তগুলোর একটি হলো আইএইএ-এর প্রবেশাধিকার পুনঃস্থাপন। ইরান অভিযোগ করছে, জুনের যুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে আইএইএও ভূমিকা রেখেছে—যদিও এর কোনো প্রমাণ দেয়নি। যুদ্ধের আগের দিন আইএইএ বোর্ড অব গভর্নরস ইরানকে তাদের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে।

ইরান আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসিকে দেশটিতে প্রবেশ করলে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে, যা আলোচনাকে আরও জটিল করছে। পাশাপাশি গ্রোসি জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিয়েও তেহরান সমালোচনা করছে।

এদিকে ভিয়েনায় আইএইএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইরানি প্রতিনিধিদের বৈঠকের কথাও নিশ্চিত করেছে তেহরান। এই বৈঠকটি ১১ আগস্ট তেহরানে সংস্থাটির ডেপুটি মাসসিমো আপারোর সফরের আলোচনার ধারাবাহিকতা।

‘স্ন্যাপব্যাক’ হুমকি খাটো করে দেখছে ইরান

আরাঘচি বলেছেন, এই হুমকি নিয়ে ইরান চীন ও রাশিয়ার মতো ‘বন্ধু দেশগুলোর’ সঙ্গে আলোচনা করবে। অক্টোবরেই ‘স্ন্যাপব্যাক’ ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে, তাই ইউরোপীয় দেশগুলো চাপ প্রয়োগের শেষ সুযোগ হিসেবে এটিকে কাজে লাগাতে চাইছে।

‘স্ন্যাপব্যাক’ সক্রিয় হলে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরবে। তবে অক্টোবরের পর কোনো নতুন প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উঠলে চীন ও রাশিয়া ভেটো দিতে পারবে, যা ইরানকে অতিরিক্ত কূটনৈতিক সুবিধা দিতে পারে।

ডিএস /সীমা

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:১৮ ভোর
যোহর ১২:০২ দুপুর
আছর ০৪:৩৫ বিকেল
মাগরিব ০৬.২৯ সন্ধ্যা
এশা ০৭:৪৪ রাত

শনিবার ২৩ আগস্ট ২০২৫