বৃহঃস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২


বিবিসির প্রতিবেদন

ট্রাম্পের শুল্কে বিপর্যস্ত দিল্লি, প্রতিশোধ নয় নতুন বাজার খুঁজছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৩

ছবি ‍সংগৃহিত

ছবি ‍সংগৃহিত

ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে গত ২৭ আগস্ট থেকে। এই শুল্কে ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি, একইসঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছে লাখ লাখ ভারতীয়র চাকরি।

এমন অবস্থায় পাল্টা পদক্ষেপ না নিয়ে ভারত এখনো কূটনৈতিক কৌশলেই অসন্তোষ জানাচ্ছে। এছাড়া প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে দিল্লি আপাতত নতুন বাজার খোঁজার পথেই এগোচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা এবং তিয়ানজিনে নিরাপত্তা সম্মেলনের আড়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে লিমুজিন যাত্রার ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

এর আগে দেশের ভেতরে রপ্তানিকারকদের জন্য কিছু সহায়তা এবং কর ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। যাতে শুল্কের ধাক্কা সামাল দেওয়া যায়।

তবু দিল্লি কঠিন অবস্থায় পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য অচলাবস্থা প্রত্যাশার চেয়েও দীর্ঘ হচ্ছে, আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের নিয়মিত তিরস্কারে সম্পর্ক আরও নাজুক হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই শুল্ক ভারতের জিডিপি থেকে প্রায় ০.৮ শতাংশ কমাতে পারে। চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৩৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমতে পারে, যা টেক্সটাইল, গয়না ও চামড়াজাত শিল্পের লাখো চাকরি ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

প্রশ্ন উঠছে— ভারত কি পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে? না করলে বিকল্প পথ কী?

২০১৯ সালে ভারত বাদাম ও আপেলসহ ২৮টি মার্কিন পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এবার পাল্টা শুল্ক ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে।

কার্নেগি এনডাওমেন্টের অধ্যাপক অ্যাশলি টেলিস বলেন, “প্রতিশোধ ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতই বেশি নির্ভরশীল”। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের কাছে রপ্তানির তিন গুণ।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, জাপান, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার মতো প্রতীকী পদক্ষেপ ঠিক হলেও সরাসরি পাল্টা শুল্ক এখনই দেওয়া অযৌক্তিক হবে। তার মতে, অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করে ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ বোঝা উচিত।

চীনের অভিজ্ঞতা দেখায়, পাল্টা শুল্ক বাণিজ্যযুদ্ধকে ভয়াবহ করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, উত্তেজনা বাড়লে যুক্তরাষ্ট্র শুধু পণ্যে নয়, সেবা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও আউটসোর্সিংয়েও চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ভারতের জিডিপির ৬ শতাংশ।

ইতোমধ্যেই মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এইচ-১বি ভিসায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর এই ভিসার ৭০ শতাংশই ব্যবহার করেন ভারতীয়রা। এতে বোঝা যায়, উত্তেজনা শুধু পণ্যে সীমিত নাও থাকতে পারে।

এ অবস্থায় ভারতের সেরা বিকল্প হবে রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনা। সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু বলেছেন, মেক্সিকো, কানাডা, চীন, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো উচিত।

শ্রীবাস্তবও একমত যে কূটনৈতিক জোট ও বাজার বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করতে হবে, আর প্রতিশোধের মতো বিকল্প পন্থা রাখতে হবে একেবারে শেষ অবলম্বন হিসেবে।

অবশ্য ভারত ইতোমধ্যে নতুন চুক্তির পথে এগোচ্ছে। জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের মতে, ইইউ’র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

তবে নতুন বাজার খোঁজা সহজ নয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ শ্রীবিদ্যা জানধ্যালা বলেন, নতুন গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত অভিযোজন লাগবে, আর শুল্ক পরিস্থিতি অনিশ্চিত হওয়ায় অনেকেই দ্বিধায় থাকবেন।

তবুও দীর্ঘমেয়াদে ভারতের বিকল্প নেই। শ্রীবাস্তবের মতে, সরকারকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাজার বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে— বিভিন্ন খাতভিত্তিক বাণিজ্য মিশন পাঠানো এবং ইউএই ও মেক্সিকোর মতো দেশে রপ্তানি কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

একইসঙ্গে প্রযুক্তি ও মানোন্নয়নে জরুরি সহায়তা দিতে হবে। নইলে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বাজার দখল করে নিতে পারে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:২৪ ভোর
যোহর ১২:৫৮ দুপুর
আছর ০৪:২৭ বিকেল
মাগরিব ০৬.১৭ সন্ধ্যা
এশা ০৭:৩১ রাত

বৃহঃস্পতিবার ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫