রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। আর এরই জেরে এবার উগ্রপন্থি চার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার দায়ে চলতি মাসেই ইসরায়েলের চার নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার অভিযোগে যুক্তরাজ্য চার ‘চরমপন্থি’ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ওই চারজনের বিরুদ্ধে আর্থিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর।
এছাড়া ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরনও ইসরায়েলকে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মূলত গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে দাঙ্গা-সহিংসতা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে বা ইসরায়েলে সংঘাত-সম্পর্কিত ঘটনায় কমপক্ষে ৩৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।
এছাড়া একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্যসহ ১০ ইসরায়েলিও নিহত হয়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বসতি এবং অননুমোদিত ফাঁড়ির কিছু বাসিন্দা ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের ওপর তাদের জমি ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হয়রানি, ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে।
বসতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা পিস নাউ-এর তথ্য অনুসারে, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের ১৬০টি বসতি এবং ১৪৪টি ফাঁড়িতে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বাস করে। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করার পরে নানা সময়ে ক্ষমতায় আসা ইসরায়েলি সরকারগুলো এসব বসতি তৈরি করে। আর ছোট ফাঁড়িগুলো সরকারি কোনও অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই ইহুদি এসব জনবসতি এবং ফাঁড়িগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচনা করে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই ধরনের অবস্থান মানতে নারাজ ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসি বলছে, বসতি স্থাপনকারীরা ইসরায়েলের রাজনীতিতে বেশ শক্তিশালী একটি পক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কাছে তাদের সমর্থনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো আশঙ্কা করছে, তারা এই সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সর্বশেষ ব্রিটিশ এই নিষেধাজ্ঞোগুলো কার্যত একটি সতর্কতা হিসাবে মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন বলেছেন: ‘চরমপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের হুমকি দিচ্ছে, প্রায়শই বন্দুকের মুখে তাদের জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে। এই আচরণ বেআইনি এবং অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রায়শই নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা পালন করা হয়নি।’
এছাড়া চরমপন্থি বসতি স্থাপনকারীরা ‘ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়ের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে’ বলেও জানিয়েছেন ডেভিড ক্যামেরন।
একইসঙ্গে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর চার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীর নাম প্রকাশ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বর্ণনাও দিয়েছে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ৪ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং সেখানে কোনও সম্পদ কিনতে পারবেন না এই চার ইসরায়েলি।
এছাড়া যতদিন নিষেধাজ্ঞা থাকবে— ততদিন দেশটিতে অর্থনীতি এবং অর্থব্যবস্থার সঙ্গেও কোনও ভাবেই সংশ্লিষ্ট হতে পারবেন না তারা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)