শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানানোর পরিবর্তে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে আত্মসমর্পণ করতে চাপ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
বুধবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন বলেন, ‘যে ব্যাপারটি আমার কাছে অবাক লাগছে, তা হলো— অধিকাংশ দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে সোচ্চার, কিন্তু কেউই হামাসকে আত্মসমর্পণ করতে বলছে না। হামাসকে নিরীহ বেসামরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অস্ত্র চালানো বন্ধ করতে বলছে না কোনো দেশ। হামাস যদি অস্ত্র ফেলে দিতে রাজি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব।’
‘এটা কীভাবে সম্ভব যে একপক্ষের কাছে কেবল দাবি জানানো হচ্ছে এবং অন্যপক্ষের প্রতি কোনো দাবি নেই?’
‘আমরা সবাই জানি যে সবাই চাই যে এই যুদ্ধ শিগগিরই বন্ধ হোক; কিন্তু যদি হামাস তার সামরিক সক্ষমতাসহ গাজায় তার অবস্থান টিকিয়ে রাখে, তাহলে বার বার ৭ অক্টোবরের মতো হামলা সেখানে ঘটতে থাকবে। আর এ ধরনের হামলা ইসরালের জন্য হুমকি, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি এবং এমনকি বৈশ্বিক শান্তির জন্যও হুমকি।’
তবে ইসরায়েলি স্থল ও বিমানবাহিনী যে মাত্রায় গাজায় অভিযান চালাচ্ছে, তারও সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘আমরা এর আগে একাধিকবার ইসরায়েলকে বলেছি, আবারও বলছি— অভিযান যেন আরো সুনির্দিষ্ট করা হয়। অর্থাৎ, হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের ক্ষেত্রে গাজার বেসামরিকদের ক্ষয়ক্ষতি যেন যতদূর সম্ভব এড়ানো সম্ভব হয়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন অন্তত ২০ হাজার ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজার ৫৮৬ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।
৭ দিনের অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের কব্জায় আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; বিপরীতে এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।
এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)