শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের শেষ দিনে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্প্রসারণ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন নেতারা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের শেষ দিনে ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাসহ, আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুর ঘটনা ছিল বিশ্বনেতাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ন্যাটোর সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক এবং এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিও আলোচনায় স্থান পায়।
মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর জেডি ভ্যান্স, ন্যাটো এবং ইউক্রেন সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন সম্মেলনের শেষদিনে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান প্রকাশ করেন। খবর ডয়চে ভেলের
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর রিপাবলিকান সিনেটর ভ্যান্স বলেন, 'আমরা আমাদের ন্যাটো মিত্রদের ভালবাসি। আমরা ন্যাটো জোটকে মূল্য দিই।'
ভ্যান্স বলেন, ট্রাম্প এবং রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা চায় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপ একটু বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। তার মত, ইউরোপ যদি বিশ্বাস করে যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাদের জন্য অস্তিত্বের হুমকি তাহলে জার্মানির মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল চালিকাশক্তিদের পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের (৫৫.৬ বিলিয়ন ইউরো) সহায়তা প্যাকেজটি ইউএস রিপাবলিকান-সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদে আটকে আছে। প্যানেলে আলোচনার সময় ভ্যান্স বলেন, এই সহায়তা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির বাস্তবতায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না।
ভ্যান্স বলেন, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানো অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে ভ্যান্সের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন। তাদের মত, এখন শান্তি আলোচনা চাইলে রাশিয়া যে আগ্রাসন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করেছিল সেটা বরং আরও জোরদার হবে।
জার্মান রাজনীতিবিদ রিকার্ডা ল্যাং, ভ্যান্সের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, পুতিনের ‘এই মুহূর্তে শান্তিতে কোনো আগ্রহ নেই। পুতিনের জয় মানে কিন্তু চীনের মতো অন্যান্য বাহিনীও ভাববে সীমান্ত পরিবর্তন করা সম্ভব। ন্যাটো এটা ধরে রাখতে পারবে না। এটা শুধুমাত্র ইইউ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলির পাশাপাশি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের শেষ দিনে আলোচনা হয়েছে। ইইউ বৃদ্ধির সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছেন জর্জিয়ান প্রেসিডেন্ট সালোমে জওরাবিচভিলি, লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিয়াস লান্ডসবার্গিস, ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা এবং পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লাও সিকোর্স্কি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল এবং লাটভিয়ান প্রধানমন্ত্রী ইভিকা সিলিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ইউরোপে আগামী ৬০ বছরের ভূ রাজনীতি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্মেলনটি শেষ হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেছেন, ইসরায়েল যেন গাজার ফিলিস্তিনিদের মিশরে জোর করার পাঠানোর চেষ্টা না করে। আমি জানি গাজা থেকে লোকেদের সরাতে এটা একটা ইসরায়েলি পরিকল্পনা ছিল। আমরা এবং মিশরীয়রা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি যাতে এটা না ঘটে।
শাতায়েহ বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ফাতাহ রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি সহিংসতা বন্ধ করে ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান।
শাতায়েহ উল্লেখ করেছেন, ফাতাহ এবং হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী রাশিয়ার আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার মস্কোতে দেখা করবে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে কে জিতবে, ইউক্রেনের যুদ্ধ কোনদিকে মোড় নেবে, তা বিবেচনার আগে সবরকম আগ্রাসন ঠেকাতে ইউরোপের নিজের ক্ষমতা জোরদার করতে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ আগ্রাসন এবং ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ, মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে একটি প্যানেল আলোচনায় বক্তৃতা দেয়ার সময় ইউক্রেনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানান।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই বলেন, বিশ্বজুড়ে সংঘাতের মধ্যে তার দেশ স্থিতিশীল একটি শক্তি হিসাবে কাজ করবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)