বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ছয় মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।
এসময় তারা ইহুদি এই দেশটিতে আগাম নির্বাচনেরও দাবি জানান। রোববার (৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে শনিবার হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে বলে মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ বলেছে, ‘আগাম নির্বাচন এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবিতে হাজার হাজার ইসরায়েলি সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে।’
কেন্দ্রীয় তেল আবিবের কাপলান জংশনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের দাবি করা হয়েছে বলেও এতে বলা হয়েছে।
এছাড়া পশ্চিম জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছেও শত শত লোক বিক্ষোভ করেছে। জবাবদিহিতা এবং নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ হয় বলে ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে।
অন্যদিকে হাইফাতে ‘শহরের কেন্দ্রস্থলে হোরেভ জংশনে প্রায় ৮ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।’
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
আনাদোলু বলছে, ইসরায়েলে এই বিক্ষোভ এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্র গাজায় বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধবিরতি এক সপ্তাহের জন্য স্থায়ী হয়েছিল, যার ফলে সেসময় গাজায় সীমিত সাহায্য প্রবেশ করে, সেইসাথে হামাস ও ইসরায়েল উভয়পক্ষ থেকেই বন্দি বিনিময় হয়েছিল।
তেল আবিব তার কারাগারে কমপক্ষে ৯ হাজার ১০০ জন ফিলিস্তিনির বন্দি থাকার কথা জানিয়েছে, যেখানে গাজায় আনুমানিক ১৩৪ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছেন। অবশ্য ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭০ জন নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস।
পৃথক প্রতিদেনে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আগাম নির্বাচন আয়োজন এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক কয়েক ডজন বন্দিকে মুক্ত করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হাজার হাজার ইসরায়েলি সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী তেল আবিবের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অংশে জড়ো হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভে বিভিন্ন স্লোগানও দেয়। মূলত ছয় মাস লড়াইয়ের পরও বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে না পারার জন্য বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
ইসরায়েলি মিডিয়া তেল আবিবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংঘর্ষের জেরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পুলিশ দ্রুত সেই আগুন নিভিয়ে ফেলে। এছাড়া বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গুলি করেছে বলেও জানা গেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে লোকেরা ‘পুলিশ, পুলিশ আপনি ঠিক কাকে পাহারা দিচ্ছেন?’ এবং ‘বেন-গভির একজন সন্ত্রাসী’ বলে স্লোগান দেয় বলে হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে।
বিক্ষোভের আয়োজকরা বলেছেন, তেল আবিব ছাড়াও দেশব্যাপী প্রায় ৫০ টি স্থানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রথম মাস থেকে শনিবার এই ধরনের বিক্ষোভ তেল আবিব এবং দেশের অন্যান্য অংশে একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)