বৃহঃস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাংলাদেশ ও ভারতে অবৈধভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের ‘মূলহোতা’ বাংলাদেশি বলে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) অমিত গোয়েল। এই চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে এক চিকিৎসকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।
অমিত গোয়েল বলেছেন, দিল্লিতে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চক্রের নেপথ্যে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে কাজ করেছেন এক বাংলাদেশি। দিল্লির হাসপাতালে কিডনির দাতা এবং গ্রহীতাও বাংলাদেশি নাগরিক।
দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের এই কর্মকর্তা বলেছেন, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ভারতীয় চিকিৎসক বিজয়া কুমারী-সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের মূলহোতা এক বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
‘‘আমরা রাসেল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি রোগী ও দাতাদের ব্যবস্থা করতেন। প্রতিস্থাপনের সাথে জড়িত নারী চিকিৎসক বিজয়া কুমারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’’ দিল্লিতে ২০১৯ সাল থেকে এই চক্রটি কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছে জানিয়ে তিনি গোয়েল বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা ২৫ থেকে ৩০ লাখ রুপি নিতেন।’’
গোয়েলের মতে, যে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার সাথে দুই থেকে তিনটি হাসপাতালের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দাতা ও গ্রহীতার মাঝে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে দিতেন বিজয়া কুমারী।
দিল্লি পুলিশের এই কমিশনার বলেছেন, এই চক্রের প্রত্যেকেরই বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গোয়েলের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
প্রাথমিক অভিযোগে জানা গেছে, ওই নারী চিকিৎসক রাজধানী দিল্লির সংলগ্ন নয়ডা শহরে ‘যথার্থ’ নামের একটি হাসপাতালে অপারেশনের নামে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ জন ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। কিডনি পাচারকারী দলের সদস্য হিসেবে এসব অপারেশন করেছেন তিনি। যাদের কিডনি তিনি সরিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক।
পুলিশ বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সক্রিয় এই চক্র মধ্যবর্তী ব্যক্তি বা দালালদের মাধ্যমে দরিদ্র বাংলাদেশিদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নয়াদিল্লির আশপাশের কিছু হাসপাতালে নিয়ে আসত। সেসব হাসপাতালে চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বাংলাদেশিদের কিডনি প্রতিস্থাপন করতেন।
ডা. বিজয়া কুমারি নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ক সার্জন। প্রায় ১৫ বছর আগে জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে যোগ দেন তিনি।
অ্যাপোলোর পাশাপাশি নয়ডার ‘যথার্থ’ হাসপাতালের ভিজিটিং কনসালটেন্ট ও সার্জনও ছিলেন ডা. বিজয়া কুমারি। ওই হাসপাতালের অতিরিক্ত মেডিকেল সুপারিটেন্ডেন্ট সুনীল বালিয়ান জানিয়েছেন, যেসব ব্যক্তির কিডনি তিনি প্রতিস্থাপন করেছেন, তাদের কেউই ওই হাসপাতালের রোগী ছিলেন না। ভিজিটিং কনসালটেন্ট হিসেবে তিনি রোগী ভর্তির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করতে পারতেন। যে ১৫-১৬ জন বাংলাদেশির কিডনি তিনি অপারেশন করেছেন, তাদের সবাইকে তার সুপারিশের ভিত্তিতেই ভর্তি করা হয়েছিল।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এএনআই।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)